পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রায়ই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হচ্ছে। সীমান্তের দুদিকে পাল্টাপাল্টি হামলাও হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির বিরোধের কারণ এবং ভূরাজনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ।
১৯৪৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৩-১ ভোটে পাকিস্তান জাতিসংঘে যুক্ত হয়। ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতার পর নতুন সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যুক্ত হতে গিয়ে পাকিস্তান কেবল একটা দেশের আপত্তির মুখে পড়ে। বিরোধিতাকারী একমাত্র ভোটটি দেন আফগান প্রতিনিধি হোসেইন আজিজ।
সম্পর্ক অবশ্য ওখানে আটকে থাকেনি সব সময়। উত্থান-পতন ছিল। শেষ পাকিস্তান-আফগান সম্পর্কে মধুরতম ক্ষণ গেছে ২০২১ সালে। কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা দখলে বহির্বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উল্লসিত ছিল পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক সংস্থা। এটা যেন তাদের বিজয় ছিল। তিন বছর পেরোনোর আগেই পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে।
ইদানীং প্রায়ই উভয় দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রায়ই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। সীমান্তের দুদিকে পাল্টাপাল্টি হামলাও হচ্ছে। ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধে মনোযোগ আটকে রাখা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে বোধগম্য কারণেই এসব খুব কম গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে আফগানরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে সোচ্চার। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এসব হচ্ছে? এসব ঘটনার কারণ ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কী?
পাকিস্তান যখন অতীত ভূমিকার ফাঁদে
গত দুই বছর পাকিস্তান তাদের দেশে তালেবান আদর্শবাদীদের সশস্ত্রতার জন্য আফগান সরকারকে লাগাতার দোষারোপ করছে। এই দোষারোপ গোলাগুলিতেও গড়াচ্ছে। শেষ ১৮ মার্চ পাকিস্তানের বিমানবাহিনী ভোররাতে আফগানিস্তানে একদফা বিমান হামলা চালায়। আক্রমণকারী সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘তেহরিক-ই-তালেবান-পাকিস্তান’ বা টিটিপির ক্যাডারদের আস্তানা ধ্বংস করতে আফগানিস্তানের ভেতর পাকতিয়ার ও খোস্তে অভিযান চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে কাবুলের ক্ষমতাসীনেরা বলছে, এটা তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। সে কারণে প্রতিবাদস্বরূপ ‘ডুরান্ট লাইন’ পেরিয়ে পাকিস্তানের খাইবার এলাকার কিছু স্থাপনা জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। এভাবে এত দিনের দুই মিত্র এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে গেল।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তদৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। নীতিনির্ধারকদের ভেতর সম্পর্কের অবনতিতে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। আবার বিষয়টা খানিক কৌতুককরও।
একসময় পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে তেহরিক-ই-তালেবান আফগানিস্তান বা টিটিএ কর্মীদের নিজেদের অঞ্চলে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়াসহ সব উপায়ে সহযোগিতা করেছে। এখন নিজ দেশে ও আফগানিস্তানে একই শক্তির বিরুদ্ধে বোমা ফেলছে তারা। এসবই ঘটছে জেনারেল জিয়া-উল-হকের আমল থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানের আফগান নীতির ফল হিসেবে। তখন থেকে পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্র নিজস্ব গোষ্ঠী স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার হস্তক্ষেপ করেছে। তালেবানদের সহযোগিতা করতে গিয়ে ক্রমেই সেই আদর্শিক সশস্ত্রতা নিজের দেশেও টেনে এনেছে।
অন্যদিকে কাবুলে তালেবানের পূর্ণাঙ্গ সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরপর পাকিস্তানে এই আন্দোলনের অনুসারীরা সীমান্তের এই দিকেও সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এখন স্থানীয় তালেবানদের প্রতিপক্ষ। টিটিপির চোরাগোপ্তা হামলায় গত দুই বছর সেনাবাহিনীর বহু জওয়ান হতাহত হয়েছেন।
এটা এখন প্রায় স্পষ্ট যে পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্র টিটিপিকে নির্মূল করা তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম নয়। এ অবস্থায় তারা চাইছে, আফগান তালেবান টিটিপির ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রক করুক। বিষয়টা সহজ নয়, হয়তো সম্ভবও নয়।
টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তালেবান?
কাবুল সরকারের কাছে পাকিস্তানের কূটনীতিবিদদের এখন চাওয়া একটাই, তোমরা ‘হয় পাকিস্তান, না হয় টিটিপি’ একটা বেছে নাও। কিন্তু যেসব পাকিস্তানি মুজাহিদ ২০২১ সাল পর্যন্ত ন্যাটোবিরোধী যুদ্ধে তাঁদের জীবন বাজি রেখে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের কীভাবে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ছেড়ে চলে যেতে বলতে পারে তালেবান সরকার? তা ছাড়া উভয়ের আদর্শ এক, লক্ষ্যও এক।
আফগান তালেবানের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আফগানিস্তানে তাদের মতো করে ‘ইসলামি শাসন’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। টিটিপিও যদি পাকিস্তানে একই লক্ষ্যে কাজ করতে চায়, আফগান তালেবান কোন যুক্তিতে তার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে পারে? এ রকম ভূমিকা রাখলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের তরফ থেকে বিরোধিতার মুখেও পড়বে।
তা ছাড়া এ রকম ভূমিকাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে প্রচার করবে ‘আইএস’ নামে পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আফগানিস্তানজুড়ে আইএসের বহু ক্যাডার সক্রিয়। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে তারা এখন তালেবানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
টিটিপি-টিটিএ-আইএস: জটিল এক সমীকরণ
আফগানিস্তানের টিটিএর মতো পাকিস্তানের এখনকার টিটিপিও দেশটির অনেকগুলো সশস্ত্র সংগঠনের একটি জোট। এতে আছে লস্কর-ই-ইসলাম, মাজার বালুচ গ্রুপ, জুন্দাল্লাহা, জামাতুল আহরার, রশিদ শহিদ ব্রিগেড, মুসা শহিদ গ্রুপ, আমজাদ ফারুকি গ্রুপ, হাকিমুল্লাহ মেহসুদ গ্রুপ ও তেহরিক-ই-পাঞ্জাব ছাড়া আরও নয়টি গোষ্ঠী। এর অন্তত দুটি গ্রুপ চীনের উইঘুর এলাকা ও উজবেকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছে। এসব গেরিলার বাইরেও পাকিস্তান-আফগানিস্তানে কাজ করছে ‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান’, যারা আইএসকে নামে এ অঞ্চলে পরিচিত। ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক আইএসের দক্ষিণ এশিয়ার শাখা বলা হয় তাদের।
গত তিন বছরে আইএসকে মাসে গড়ে একটার মতো হামলা চালিয়েছে আফগানিস্তানে। আপাতদৃষ্টে এই সংখ্যা উদ্বেগজনক নয়। এটা বরং আইএসকের দুর্বল অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। এই সংগঠনের হামলার ক্ষমতা কমে যাওয়ার একটা বার্তা হলো, আফগানরা তালেবানকে আরও সময় দিতে আগ্রহী। এখনই তারা অপর কোনো কঠোর ধাঁচের সংগঠনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চাইছে না।
তবে টিটিএ যদি পাকিস্তানের অনুরোধ বা চাপ মেনে টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যায়, তখন সেই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট তাদের কর্মীরা আইএসকের সমর্থক বনে যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে অনেকে প্রকাশ্যে কাবুল সরকারের নির্দেশনা মানলেও গোপনে আইএসকের সাহায্যকারী হয়ে থাকবেন। কাবুল সরকারের জন্য এটা এক জটিল পরিস্থিতি। ন্যাটোকে তাড়িয়ে এখন ঘরের ভেতর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে তারা।
বিভিন্ন প্রদেশে প্রভাব ধরে রাখতে ইতিমধ্যে বহুবার আইএসকের ওপর হামলা চালিয়েছে টিটিএ। ফলে এই উভয় শক্তির সম্পর্ক এরই মধ্যে যথেষ্ট খারাপ। আইএসকের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এই দলে অনেক দেশের যোদ্ধা আছে। ফলে এদের প্রভাব বেড়ে যাওয়া বহির্বিশ্বের জন্য তালেবানের প্রভাব বৃদ্ধির চেয়ে বেশি নজরকাড়া ঘটনা।
আইএসকের বৃদ্ধি চীনের জন্য বিশেষভাবে দুর্ভাবনার। পাকিস্তানের জন্যও সেটা সত্য। পাকিস্তানে টিটিপির কর্মীদের আইএসকের দিকে ঝুঁকে পড়ার শঙ্কা আছে। বিশেষ করে টিটিপি যদি ‘জিহাদি’ কর্মসূচি বাদ দিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়ায় আসে, তাহলে অসন্তুষ্ট গ্রুপগুলো আনুগত্য পাল্টে আইএসকের সঙ্গে হাত মেলাবে।
আবার আফগান-তালেবানদের আশ্রয় ও সহযোগিতা না থাকলে পাকিস্তানের ভেতর টিটিপির সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া দুরূহ। সে রকম অবস্থায় টিকে থাকার সংগ্রামে টিটিপি ও আইএসকের ভেতর পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে এবং টিটিএর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হবে। এরই মধ্যে আফগান মাটিতে পাকিস্তানের গোপন হামলার শিকার টিটিপি ক্যাডাররা মনে করছেন যে কাবুল সরকারের গোয়েন্দা সহায়তা ছাড়া এ রকম আক্রমণ সম্ভব নয়।
সব মিলে টিটিপি, টিটিএ ও আইএসকে এখন তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ পড়েছে। এটা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়। এ রকম জটিল পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কোনো পদক্ষেপই ভবিষ্যতে সংঘাত–সংঘর্ষ কমাতে পারবে বলে মনে হয় না। এ যেন তাদের পুরোনো কর্মকাণ্ডের ঐতিহাসিক অনিবার্যতা হয়ে উঠেছে।
ধর্মীয় ও সামরিক বিবেচনার বাইরে চলতি অবস্থার জাতিগত কারণও আছে। টিটিপি ও টিটিএ উভয় সংগঠনেই পশতুদের আধিপত্য। পাঞ্জাবিদের সঙ্গে পশতুদের ঐতিহাসিকভাবে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব আছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে পাঞ্জাবিদেরই আধিপত্য। গত নভেম্বর থেকে পাকিস্তান সরকার গণহারে আফগান শরণার্থীদের দেশ থেকে যে বের করে দিচ্ছে, সেটাও পশতু-পাঞ্জাবি দূরত্ব আরেক দফা বাড়াল। এ অবস্থায় পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্রকে মুখ্যত সামরিকভাবেই কেবল টিটিপি-আইএসকে এবং হয়তো টিটিএকেও মোকাবিলা করতে হবে।
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বহুমাত্রিক সংকট
টিটিপিকে মোকাবিলায় সংকটের পাশাপাশি পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ সময় রাজনৈতিক কারণে প্রবল এক ইমেজ সংকটে আছে। ইমরান খানকে কোণঠাসা করতে গিয়ে তারা খুব উৎকটভাবে দেশটির নির্বাচনী রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্বাস করছে নাগরিকদের একাংশ। ইমরানের দলের বহু নেতা-কর্মী গত দুই বছরে সামরিক আমলাতন্ত্রের রোষানলে পড়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। পিটিআইয়ের সমর্থনে জনগণের দেওয়া ভোটের রায়ও মোটা দাগে বদলে দেওয়া হয়েছে।
এসবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তীব্র জনরোষ আছে। সেটা থেকে বাঁচতেও পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী আফগান সরকারকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে বলে অনেকের অনুমান। এতে জনগণের মনোযোগ কিছুটা হলেও অন্যদিকে যাবে।
তবে এই সংকটের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, আফগানিস্তান ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক অস্ত্রের যে বিপুল ভান্ডার কাবুলে রেখে এসেছে, তার করুণ শিকার হতে পারে পাকিস্তানের মাটি ও মানুষ। বিশেষ করে ডুরান্ট লাইনের দুই দিকে থাকা পশতুরা দুই দেশের সংঘাতে প্রতিদিন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে থাকবে এবং সেটা এরই মধ্যে ঘটছেও।
আফগানিস্তানের পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের সামরিক পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে। এই সীমান্তে সমস্যা হচ্ছে বালুচ গেরিলাদের ঘিরে। ইরান বলছে, পাকিস্তানের ভেতর থেকে জয়েস আল-আদল সংগঠনের সুন্নি গেরিলারা তাদের বালুচ-অধ্যুষিত অঞ্চলে মাঝেমধ্যে হামলা চালায়। এই সংগঠন সক্রিয় মূলত ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, তাদের এলাকার বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইরানের ওই অঞ্চল। বাস্তবতা হলো, ইরান ও পাকিস্তান সীমান্তের দুই দিকেই বালুচরা আছে এবং উভয় দেশের নীতিনির্ধারকদের আচরণে তারা অসন্তুষ্ট।
ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতার একটা সরাসরি ফল দাঁড়িয়েছে ইসলামাবাদকে এখন থেকে ভারত সীমান্তের পাশাপাশি ওই দুই সীমান্তেও বড় আকারে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে হচ্ছে। এটা তাদের সামরিক ব্যয়ভার বাড়াচ্ছে। আবার দেশের ভেতরও টিটিপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি নয়াদিল্লির জন্য বিশেষ স্বস্তিদায়ক ও লাভজনক। আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখল কাশ্মীরে প্রভাব ফেলবে বলে যে অনুমান করা হতো, সেটা এখনো ঘটেনি। আবার আফগানদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতিতে ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ছে।
আফগান সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাইয়ের সঙ্গে ভারতের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা আছে। একসময় তিনি দেরাদুনে ক্যাডেট ছিলেন। সম্ভবত তাঁরই প্রভাবে কয়েক মাস ধরে কাবুলের নীতিনির্ধারকেরা পাকিস্তানের করাচির বদলে ইরানের চাবাহার বন্দরকে বেশি ব্যবহারের কথা ভাবছেন, যা ওই বন্দরের আরেক বড় ব্যবহারকারী ভারতের বাজারে তার ফলের বিক্রি বাড়াবে।
ইরানের চাবাহার বন্দর পাকিস্তানের ওপর কাবুলের অর্থনৈতিক নির্ভরতা বেশ কমাবে বলে ধারণা করা যায়। রপ্তানির বাজার হিসেবে কেবল পাকিস্তাননির্ভরতায় আফগানরা অনেক পণ্যেরই দাম কম পায়। নয়াদিল্লি এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কাবুলে অল্প কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিবিদ আছেন, তবে উভয় দেশ বাণিজ্য এবং অন্যান্য বিষয়েও সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী।
এ রকম আগ্রহ ইসলামাবাদের জন্য উৎসাহজনক নয়। পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা সব সময়ই এমন এক আফগানিস্তানের কথা ভেবেছেন, যা তাঁদের প্রত্যাশা ও সুবিধামতো চলবে। কিন্তু তালেবান শাসনামলেও সেটা না হওয়া তাঁদের জন্য অসহনীয়। পাক–আফগান বিরোধের এটাও একটা বড় দিক।
Publisher & Editor