নিউইয়র্কে এক বৈঠকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স, মিস রোজমেরি ডিকার্লো, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি জাতিসংঘের জোরালো সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পররাষ্ট্র সচিবের প্রথমবারের মত নিউইয়র্কে সরকারী সফরকালে গতকাল ৯ অক্টোবর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বহুপাক্ষিকতার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক নানাবিধ প্রচেষ্টার বিষয়সমূহ ঊঠে আসে। ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সমর্থনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে, এ সমর্থনের জন্য ডিকার্লোকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র সচিব মোঃ জসিম উদ্দিন।
বৈঠকে তাঁরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান এবং দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট বিষয়েও আলোচনা করেন। এসময় পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উর্ধ্বতন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেলকে অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনায়, পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক মনোযোগের পাশাপাশি বৈশ্বিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেন। তিনি মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্র তৈরি করছে। সমগ্র অঞ্চলে এই সংকট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করে, মিয়ানমারের চলমান সঙ্কট নিরসন এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাবটি উল্লেখ করে, পররাষ্ট্র সচিব এ সম্মেলন আয়োজনে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন।
আলোচনার সময়, আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসের মধ্যে চলমান সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাতিসংঘ মহাসচিবের নতুন বিশেষ দূত মিস জুলি বিশপ সামগ্রিকবভাবে এই সমস্যা মোকাবেলায় সকল অংশীজনের সাথে কাজ করে যাবেন।
বৈঠকের পূর্বে পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ‘নারীর অগ্রগতি’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করে। প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি নারী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি নারী শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ, এবং নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে তাদের সুস্থতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগসমূহের উপর আলোকপাত করেন। পররাষ্ট্র সচিব, ১৯৯৫ সালের বেইজিং ঘোষণা এবং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন, CEDAW এবং নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা (WPS) এজেন্ডার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ২০০০ সালে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা (WPS) এজেন্ডার প্রতিষ্ঠাতা রেজ্যুলেশন ১৩২৫ গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তৎকালীন অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
Publisher & Editor