মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

বাসার ছাদ থেকে মিলল অরোরার দেখা

প্রকাশিত: ০১:২০, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ |

কানাডা এসেছি পাঁচ মাস হলো। আমরা থাকি সাস্কাচুয়ান প্রভিন্সের সাস্কাটুন নামের ছোট একটা শহরে। এখানে আসার পর জানতে পেরেছি, সাস্কাচুয়ানকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব লিভিং স্কাই’। তখনো বুঝতে পারিনি এর মানে। এক সপ্তাহের মধ্যেই কোনো এক সকালে জানতে পারি, আগের দিন রাতে আকাশজুড়ে ছিল অরোরার সেই আলোর নাচ। কী যে আফসোস হলো, একই সঙ্গে বিস্ময়।

শুধু নরওয়ে থেকে অরোরা দেখা যায়, এত দিনের সেই জানাটা যে কত বড় ভুল ছিল, সেটা বুঝতে আর দেরি হলো না। এর পর থেকে শুধু অপেক্ষা, আবার কবে আসবে অরোরা। অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হয়নি। তার কিছুদিন পরেই ঘরের দরজা খুলে বাইরে এসে দেখতে পেলাম আকাশজুড়ে আলোর নাচ।

অরোরা বা মেরুজ্যোতি হলো আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর ঢেউ, যা মূলত মেরু অঞ্চল থেকে দেখা যায়। উত্তর ও দক্ষিণ দুই মেরুতেই দেখা গেলেও মূলত নর্দান লাইট হিসেবে এটি বেশি পরিচিত।

অনেক বছর আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল, জীবনে কোনো একদিন এই অরোরা বা নর্দান লাইট দেখতে নরওয়ে যাব। এক বন্ধু একবার নরওয়েতে দেশান্তরি হওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। এত দেশ থাকতে নরওয়ে কেন? জিজ্ঞেস করাতে জানতে পেরেছিলাম যে অরোরার দেখা পাওয়ার জন্য নরওয়ে যেতে হবে। তখন থেকেই ধারণা ছিল একমাত্র নরওয়ে থেকেই হয়তো অরোরা দেখা যায়।

যে বিস্ময় দেখতে নরওয়ে ঘুরতে যাব ভেবেছিলাম, দরজা–জানালা খুলে ঘরে বসেই দেখতে পাব সেটা কোনো দিনই ভাবিনি। এমনকি কানাডা আসার আগেও ভাবিনি এমন বিস্ময় অপেক্ষা করছে। মনে মনে একটাই ধারণা ছিল যে কানাডার সাস্কাচুয়ান মানে বরফে ঢাকা এক প্রদেশ। যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রির ও নিচে চলে যায় প্রায়ই। কিন্তু এখানে যে গ্রীষ্মকালও আছে, যে সময় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকে। কিংবা বসন্ত আর শরতের প্রকৃতি। একেক সময়ে প্রকৃতির রং, গাছের পাতার রং, আকাশের রূপ ভিন্ন ভিন্ন। পৃথিবী নিয়ে আমাদের জানার যে কতখানি কমতি রয়েছে, সেটা আর পরিষ্কার করে না বলে দিলেও চলে।

এই পাঁচ মাসে বেশ কয়েকবার অরোরা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। একসময় যেটা মনে হতো স্বপ্ন, এখন সেটা প্রায়ই দেখা মেলে। এ বছরে কানাডাজুড়ে সবচেয়ে বেশিবার অরোরা দেখা দিয়েছে। সবুজ, বেগুনি, লাল আরও কত যে রং। সেগুলো আবার আকাশে নেচে বেড়াচ্ছে। খুব বেশি সময় এক জায়গায় স্থায়ী থাকছে না। কী অদ্ভুত সুন্দর!

কানাডায় আসার আগে শুনেছিলাম, বরফে ডুবে থাকব। দেশ থেকেই কাঁপা শুরু করছিলাম ভয়ে। তাই বরফ থেকে বাঁচার জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম! ও মা এসে দেখি রোদ আর গরম। বরফ না পেলেও অরোরার মধ্যে ডুবে আছি আসার পর থেকে, প্রতিদিন আমার সঙ্গে কথা বলতে আসে মিস অরোরাও।

বরফ না পেলেও, অরোরাকে যে আমাদের বাসার ওপর আকাশেই দেখতে পাব, তা আসলেই ভাবিনি। আকাশে বিশাল আধখানা চাঁদ ছিল, সেদিন যা আমার ফোনে আনতে পারিনি। তবে অরোরাকে পরিবারসহ ধরে ফেলেছিলাম মুঠোফোনে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor