মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

‘সেই দুর্ঘটনা পন্তের উপকারই করেছে বেশি’

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২১ অক্টোবর ২০২৪ |

ঋষভ পন্ত ‘নড়বড়ে নব্বই’য়ে কেন বারবার আউট হচ্ছেন? ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও ছেলেদের জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক এম এস কে প্রসাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। ৬ টেস্ট ও ১৭ ওয়ানডে খেলা প্রসাদের ‘নড়বড়ে নব্বই’ বা ‘নার্ভাস নাইন্টিজ’ কথাটাতেই আপত্তি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ৯০ থেকে ৯৯—এ পথটুকুতে ‘নার্ভাস নাইন্টিজ’ কেন বলা হয়?

প্রশ্নটি যেহেতু পন্তকে নিয়ে, তাই ভারতের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে ধরেই প্রসাদ নিজের ভাবনাটা বলেছেন। তাঁর মতে, ৯০ থেকে ৯৯—ব্যাটিংয়ের এ সময়ে কেউ যদি স্নায়ুচাপেই ভুগবে, তাহলে তো এতবার আউট হবে না! আরও বেশি সাবধান থাকবে। প্রসাদ তাই ব্যাটিংয়ের এই পথটুকুকে ‘নার্ভাস নাইন্টিজ’ বলতে নারাজ। তবে প্রসাদ যা–ই বলুন, ক্রিকেটের শব্দভান্ডারে স্থায়ী সদস্যপদ পেয়ে গেছে এ দুটি শব্দ।

বেঙ্গালুরুতে গত পরশু শেষ হওয়া টেস্টে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ ম্যাচে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৯ রানে আউট হন পন্ত। টেস্টে এ নিয়ে সপ্তমবার নব্বইয়ে ঘরে আউট হলেন পন্ত। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে পন্তের মধ্যে এত বেশিবার ‘নড়বড়ে নব্বই’য়ে আর কেউ আউট হননি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০ বার নব্বইয়ের ঘরে আউটের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে স্টিভ ওয়াহ, রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারকে।

টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রসাদ এ নিয়ে কথা বলেছেন। ‘নড়বড়ে নব্বই’য়ে পন্তের ৭ বার আউট হওয়া নিয়ে তিনি কী মনে করেন—এই প্রশ্নের উত্তরে প্রসাদ বলেছেন, ‘আমরা এটাকে নার্ভাস নাইন্টিজ (নড়বড়ে নব্বই) বলছি কেন? আপনার কি মনে হয় এটা নার্ভাস নাইন্টিজ? সে হয়তো আউট হতে পারে, কিন্তু এটাকে নার্ভাস নাইন্টিজ বলে মনে করি না। স্নায়ুচাপে ভুগলে কেউ এতবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয় না। সেঞ্চুরি বা অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো খেলোয়াড় সে নয়। সে এমন এক খেলোয়াড়, যে পরিসংখ্যানের জন্য খেলে না। ব্যাটিংয়ের সময় স্নায়ুচাপে ভুগলে তো সে কোনো নব্বইকেই ১০০ বানাতে পারত না।’

২০২২ সালের ডিসেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ঋষভ পন্ত। আর কখনো ক্রিকেট খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এ বছর আইপিএল দিয়ে মাঠে ফেরার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ব্যাটেও রান পাচ্ছেন নিয়মিতই। এ নিয়ে প্রসাদের কথা শুনলে মনে হবে, ভয়ংকর সেই গাড়ি দুর্ঘটনা পন্তের ক্ষতি করার চেয়ে উপকারই করেছে বেশি!

বিশ্বাস হচ্ছে না? প্রসাদের মুখেই শুনুন, ‘সেই আঘাতের কারণে সে আগের চেয়ে বেশ শান্ত হয়েছে। জীবন ও খেলার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা বেড়েছে। আগে তার মানসিকতা ছিল “একটা কিছু হলেই হলো।” কিন্তু দুর্ঘটনার পর খেলার প্রতি পন্তের মনোভাব একেবারেই পাল্টে গেছে। সে নিজেকে যেভাবে পরিচালনা করছে, তা অবিশ্বাস্য।’”

প্রসাদ এরপর বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার পর সে আরও দায়িত্ববান হয়েছে। এক বছর সে বসে থেকে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করেছে। সৃষ্টিকর্তা তাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন, সে এটা বুঝতে পারার পর সেই উপলব্ধি খেলা এবং তার জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে।’ প্রসাদের ভাষায়, ‘দুর্ঘটনা থেকে সেরে ওঠার সময়টা পন্তকে সত্যিই অনেক কিছু শিখিয়েছে। সবার ক্যারিয়ারেই কোনো না কোনো পর্যায়ে একটা বাঁক থাকে। সেই দুর্ঘটনা পন্তের ক্ষতি করার চেয়ে উপকারই করেছে বেশি।’

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor