বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘পাঠ্যসূচিতে মেয়েদের রাজনৈতিক চর্চা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৮

পুরুষতান্ত্রিকতা কেবল পুরুষের মধ্যেই নয়, নারীর মধ্যেও আছে। এজন্য তৃণমূল পর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদের জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারণ করে দেওয়ায় অনেক নারী গৎবাধা ভূমিকার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। পরিবার থেকে মেয়েদের চলাফেরায় যে গণ্ডি বেঁধে দেওয়া হয় তা পরিবর্তনে স্কুল কলেজের কিশোরী মেয়েদের মধ্যে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক চর্চা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাঠ্যসূচিতে মেয়েদের রাজনৈতিক চর্চার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শনিবার ( ০২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমতা’ এই স্লোগানের আলোকে সাংগঠনিক পক্ষ পালন (১৮-৩১ অক্টোবর) কর্মসূচীর অংশ হিসেবে তরুণীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সভা আয়োজনের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মেহেরুন্নেছা পরশমণি, রওনক জাহান, ওয়াসিমা ফারজানা, নারীবাদী সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান, নিহা, আফসা এবং মণি দীপা চক্রবর্তী, সায়মা আলী অদিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানজিনা হাফসা, কলেজ শিক্ষার্থী তানিয়া, ওয়াইডব্লিউ সিএ’র শিক্ষার্থী স্তুতি, দেবলীনা ভট্টাচার্য, ফিল্মমেকার সাদিয়া আফরীন অরণী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সিউতি সবুর এবং বহ্নিশিখার তাসাফ্ফি হোসেন। আলোচনা শেষে উপস্থিত সবার সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে সভা শেষ হয়। আলোচনায় বক্তারা বলেন, নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তৃণমূলে কাজ করতে হবে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য দূর করতে সকল ধরনের সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক কারণে আসা বাধা দূর করাসহ, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে নারীর অধিকার আদায়ের পথ সুগম হবে।

ড. সিউতি সবুর বলেন, গত ৫ বছরে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি অনেক বড় ইস্যুতে মহিলা পরিষদ যেমন আন্দোলন করেছে, তেমন ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও আন্দোলন করেছে। পাশাপাশি তরুণীদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গঠনের কাজ করছে। তবে আগামীতে নারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সম্মিলিতভাবে একটা বড় ধরণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা আবশ্যক।

নারীবাদী সংগঠক তৃষিয়া নাশতারান বলেন, নারী আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পাশাপাশি গঠনমূলক, সুচিন্তিত মতামতের আলোকে হওয়া উচিত। মৌলবাদী আক্রমণের মূল লক্ষ্য থাকে নারীকে অদৃশ্য করা, এক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি আরও দৃশ্যমান হওয়া আবশ্যক। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নারী আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। মেহেরুন্নেছা পরশমণি বলেন, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি নারী-পুরুষের সমতা। গ্রামের নারীকে এখনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে দেওয়া হয়না। এবিষয়ে সচেতনমূলক কর্মসূচিতে তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরিবারের পুরুষদের নারীর সমান ও অধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে হবে।

রওনক জাহান বলেন, নারীকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সচেতন করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিকতা কেবল পুরুষের মধ্যে নয় এমন মানসিকতা নারীদের মধ্যেও আছে। এজন্য তৃণমূলে পরিবারের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তনে সচেতনমূলক কর্মসূচি করার জন্য মহিলা পরিষদকে আহ্বান জানান তিনি। ওয়াসিমা ফারজানা বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী এখনো পিছিয়ে আছে, তাদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আছে, এবিষয়ে নারীদের সচেতন করে তুলতে পারলে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে আগ্রহী হবে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor