বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আলেপ্পো দখলের পর আরও অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০

সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বেশির ভাগ অংশ দখলের পর এবার দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এটি ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের পর কয়েক বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ইদলিব প্রদেশভিত্তিক ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে রোববার বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত সরকারি বাহিনী কিছু এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে, বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক বিমান হামলা চালায় রুশ ও সিরীয় বাহিনী। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও রয়টার্সের। 

আলেপ্পো ও ইদলিবের একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন সিরীয় সৈন্যকে আটক করা হয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পুনরায় সেনা মোতায়েন করছে। রোববার উভয় পক্ষই অগ্রগতির দাবি জানায়। সেনাবাহিনী হামা প্রদেশে বেশ কিছু এলাকা সুরক্ষিত করার দাবি করেছে। 

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানায়, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরের কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সর্বশেষ দেশটির সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে, বিদ্রোহীরা শহরের ‘বড় অংশে’ ঢুকে পড়েছে।

২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের ওই শহর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী। এর পর থেকে গৃহযুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই বিদ্রোহীদের বড় লড়াই। শনিবার প্রেসিডেন্ট আসাদ ‘সব সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের মোকাবিলা করে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার করেন।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের আক্রমণ যতই জোরালো হোক না কেন, আমাদের সহযোগী ও বন্ধুদের সহায়তায় তাদের পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করা কোনো ব্যাপারই নয়। সেই সক্ষমতা আমাদের দেশের আছে। 

২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছেন। তবে ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘাত প্রায় বন্ধই ছিল। যদিও বিরোধী বাহিনীগুলো দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব শহর এবং ওই প্রদেশের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। আলেপ্পো শহর থেকে ইদলিবের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর হাতে পতনের আগ পর্যন্ত এটি ছিল বিদ্রোহীদের একটি শক্ত ঘাঁটি।

এবার জিহাদি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) এবং এর কয়েকটি সহযোগী গ্রুপ আলেপ্পো আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি তুরস্ক সমর্থিত একটি গোষ্ঠী। এইচটিএসকে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়। তারা এর মধ্যেই ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করছে। 

সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, বিদ্রোহীরা আলেপ্পো ও ইদলিবের কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের হামলা করেছে এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে লড়াই চলছে। লড়াইয়ে কয়েক ডজন সেনা নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।

এদিকে, রাশিয়ার বিমানবাহিনী রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। গৃহযুদ্ধ যখন চরমে উঠেছিল, তখনও আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার ক্ষেত্রে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনী আলেপ্পো পুনর্দখল করে নিয়েছিল। এর পর থেকে এবারের হামলাই শহরকে ঘিরে প্রথম ঘটনা। 

বোমা হামলার পর স্থানীয়রা বলেছেন, অভিযানগুলোর একটি ইদলিবের কেন্দ্রে জনাকীর্ণ আবাসিক এলাকায় আঘাত করেছিল। তুরস্কের সীমান্তের কাছে একটি বিদ্রোহী উপত্যকার বৃহত্তম এই শহরে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ অস্থায়ী তাঁবু ও ঘরে বসবাস করে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, অন্তত চারজন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। 

সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তার মিত্র রাশিয়া বলেছে, তারা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে তারা বেসামরিকদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। 

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor