রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ওটা কাকারই ছেলে, ‘ডিএনএ পরীক্ষার দরকার নেই’

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ |

বৃক্ষ তোমার নাম কী? উত্তর আপনার জানা—ফলে পরিচয়। তেমনি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কাকার ছেলের নাম জানা না থাকলে কিংবা তাকে না চিনলেও সমস্যা নেই। ধরুন, ১৬ বছর বয়সীদের দুটি দল মাঠে নামিয়ে দেওয়া হলো। একটি দলে আছে কাকার ছেলেও। কাকার খেলা আপনার দেখা থাকলে বিশ্বাস করুন, ম্যাচ শুরুর পর তাঁর ছেলেকে চিনে নিতে এতটুকু দেরি কিংবা দ্বিধা হবে না। আঙুলটা তুলে ঠিকই দেখিয়ে দিতে পারবেন, ওই তো কাকার ছেলে, ‘ডিএনএ পরীক্ষার দরকার নেই’।

শেষ কথাটি ভিডিওসহ ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেন—সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আরও একটি বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। কাকাকে নিঃসন্তান ভাবলে খবরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ভিডিওটি দেখে কিন্তু ভুলও হতে পারে। ৪২ বছর বয়সী কাকা ফুটবল ছেড়েছেন ২০১৭ সালে। কিন্তু এখনো সেই আগের মতো ছিপছিপে শরীর, খেলার দম ফুরিয়ে গেলেও তাঁর একহারা শরীর দেখে ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিওর ঈর্ষা হতে পারে! উনি বেশ মোটাসোটা কি না, তাই। যাহোক, ভিডিওটি দেখে কিন্তু মনে হতেই পারে, কাকা বুঝি আবারও নেমে পড়েছেন ফুটবল মাঠে! ওই তো বাতাস চিরে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের চেপে ধরার মধ্যে ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া সেই দৌড়। সেই চিরায়ত ইনসাইড-আউটসাইড ডজ, বল পায়ে ডজ দিতে এক সেকেন্ডের বিরতি, দৌড়ের সময় বাতাসে গা এলিয়ে দেওয়া সেই চুল, এমনকি শরীরের বাঁকও একই! না। কল্পনার রথ থামিয়ে এবার সত্যটা বলে দেওয়া যাক।

সত্য প্রথম কথাটিই। ভিডিওটি কাকার ১৬ বছর বয়সী ছেলে লুকা সেলিকো লেইতের ফুটবল খেলার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও দেখেই উঠেছে ঝড়। কেউ বলছেন, ছেলে তো বাবার ‘কার্বন কপি’। কেউ আবার মজা করে রায় দিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষার দরকার নেই, ওটা কাকারই ছেলে। কেউ আবার এককাঠি সরেস, নাহ, ওটা কাকাই!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডে পরিণত হওয়া ভিডিওটির ভিউ ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’। ভিডিওটি ঠিক কবেকার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম কারা ছেড়েছে—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার এক্সে ভিডিওটি ছেড়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা। তার আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ‘সাও পাওলো’ নামে একটি এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। সেই আইডির বায়োতে ‘সমোস সাও পাওলোনিনোস’ (উই আর সেন্ট পাউলিনেস) নামে আরেকটি হ্যান্ডল রয়েছে, যেটার বায়োতে লেখা হ্যান্ডলটি সাও পাওলো ফুটবল ক্লাবের জন্য নিবেদিত।

সেই হ্যান্ডল থেকেও গত ১৭ ডিসেম্বর কাকার ছেলের ফুটবল খেলার ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ব্রাজিলের হয়ে ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী এবং ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকার ক্যারিয়ার শুরু ১৯৯৪ সালে সাও পাওলো ফুটবল ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে। ক্লাবটির মূল দলে তিন বছর খেলার পর ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে সেরা সময় কাটান কাকা। সিরি আ, ক্লাব বিশ্বকাপ, সুপার কাপ জয়ের পাশাপাশি জেতেন চ্যাম্পিয়নস লিগও। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়ে চার মৌসুমে একবার লা লিগা জিতেছেন। ২০১৩ সালে সেখান থেকে এসি মিলানে এক মৌসুমের জন্য ফিরেছিলেন কাকা। সাবেক এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে করেছেন ২৯ গোল। কাকাকে তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিন বছর এমএলএসের ক্লাব অরল্যান্ডো সিটিতে খেলার পর অবসর নেন কাকা।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্ট এর ধারণা, ভিডিওটি করা হয়েছে ব্রাজিলে আর সেটি একটি অনুশীলন ম্যাচের। তবে বেশ কিছু ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে ভিডিওটির ক্যাপশনের নিচে ইএসপিএন লেখা।

ছোটবেলার প্রেমিকা ক্যারোলিন সেলিকোকে ২০০৫ সালে বিয়ে করেন কাকা। ২০০৮ সালের জুনে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে লুকার জন্ম। সেলিকো ও কাকার ঘরে একটি কন্যাসন্তানও জন্ম নেয়।

২০১৫ সালে সাও পাওলোয় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ব্রাজিলের অনুশীলনে লুকার ফুটবল–প্রতিভা দেখা গিয়েছিল। দারুণ পায়ের কাজে ব্রাজিলের ডিফেন্ডার দাভিদ লুইজকে বোকা বানিয়েছিলেন ৭ বছর বয়সী লুকা। ২০১৫ সালে সেলিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় কাকার। সেই বিবাহবিচ্ছেদের কারণটা এ বছর এপ্রিলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘সান’কে জানিয়েছিলেন সেলিকো, ‘কাকা আমার সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। ভালো ব্যবহার করেছে। ভালো একটি পরিবার দিয়েছে। কিন্তু আমি সুখী ছিলাম না। কিছু একটা ছিল না। সমস্যাটা হলো, সে আমার জন্য বেশি পারফেক্ট ছিল।’

২০১৯ সালে মডেল ক্যারোলিনা দিয়াসকে বিয়ে করেন কাকা। তাঁদের ঘরে দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor