মেলবোর্ন, সেঞ্চুরিয়ন, বুলাওয়ে—আজ বক্সিং ডেতে টেস্ট ক্রিকেটের যেন মেলা বসছে! লেখাটা যখন পড়ছেন, ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়া–ভারতের বক্সিং ডে টেস্ট শুরু হয়ে গেছে। ৯০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে আজ প্রথম দিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে আগের দিনই।
মেলবোর্ন থেকে প্রায় ১০ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দূরের পৌর এলাকা দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে আজ আরেক বক্সিং ডে টেস্টে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটায়।
সেঞ্চুরিয়ন থেকে প্রায় ৬৩৬ কিলোমিটার দূরের শহর বুলাওয়েতে একই সময়ে খেলতে নামবে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তান। জিম্বাবুয়ের মাটিতে এটিই হতে যাচ্ছে আফগানদের প্রথম টেস্ট। ম্যাচের শুরুটা বক্সিং ডেতে হওয়ায় যা ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
টেস্ট ক্রিকেটে একই দিনে একাধিক ম্যাচ শুরু হওয়া বিশেষ ঘটনা নয়। তবে ২৬ ডিসেম্বর বিশেষ। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিনের ঠিক পরের দিনটা বক্সিং ডে নামে পরিচিত।
এই দিনে টেস্ট খেলা অবশ্য একসময় বিরলই ছিল। কারণ, খ্রিষ্টধর্মালম্বীরা বড়দিনকে কেন্দ্র করে লম্বা ছুটির মধ্যে থাকে। ১৮৭৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটের জন্মের পর বক্সিং ডেতে প্রথমবার খেলা হতে দেখা যায় ১৯১৩ সালে। জোহানেসবার্গের ওল্ড ওয়ান্ডারার্সে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে শুরুটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হলেও দেশটিতে বক্সিং ডেতে টেস্ট আয়োজনের রীতি গড়ে ওঠেনি, যেটা পরে অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৯টি বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ কামিন্স–স্মিথদের সঙ্গে রোহিত–কোহলিদের চলমান ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫০তম বক্সিং ডে টেস্ট।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট হয় ১৯২৪ সালে সিডনিতে, আর মেলবোর্নে প্রথমবার হয়েছিল ১৯৫০ সালে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে বক্সিং ডেতে অনিয়মিতভাবে টেস্ট আয়োজন করে থাকে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত একটিই বক্সিং ডে টেস্ট খেলেছে। ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়েলিংটনে।
বাংলাদেশেও একটি টেস্ট বড়দিনের পরদিন শুরু হয়েছিল। তবে ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে হওয়া সেই ম্যাচের বক্সিং ডে টেস্ট হিসেবে পরিচিতি নেই।
বক্সিং ডে টেস্টের নামকরণ কীভাবে হলো?
কারও কারও মনে কৌতূহল জাগতে পারে ক্রিসমাস বা বড়দিনের পরদিন শুরু হওয়া টেস্টকে ‘বক্সিং ডে টেস্ট’ বলা হয় কেন? বক্সিং বলতে একটা খেলা বোঝায়, সোজা বাংলায় বললে ‘ঘুষাঘুষি’; কিন্ত বক্সিং ডের সঙ্গে বক্সিং নামের খেলার কোনো সংযোগ নেই। বিষয়টা যাদের অজানা, তাদের জন্যই একটু স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
বক্সিং ডে নামকরণের পেছনে দুটি তত্ত্ব আছে। অনেকে মনে করেন বড়দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর যেসব উপহার পাওয়া যায়, সেগুলো ওই দিন বাক্স (বক্স) খুলে দেখার সময় হয় না। তাই উপহারের বাক্স খোলা হয় পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর। এদিন বক্স খোলা হয় বলে এর নাম হয়েছে ‘বক্সিং ডে’। দ্বিতীয় তত্ত্বটি হলো ২৫ ডিসেম্বর অনেকে খাটাখাটুনি করেন, বিশেষ করে গৃহকর্মী ও পরিচারকেরা। সেই কাজের জন্য তাঁদের পরের দিন পুরস্কারের বাক্স দেওয়া হয়। কোনো কোনো বর্ণনামতে দুস্থ ও দরিদ্রদের উপহার দেওয়ার দিনটিই ‘বক্সিং ডে’।
বক্সিং ডে ম্যাচের প্রথম হদিস পাওয়া যায় ১৮৬৫ সালে। তবে তখন এই নামকরণ হয়নি। এমসিজিতে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলস মুখোমুখি হয়েছিল। তবে সেই ম্যাচ ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল না; বরং ম্যাচের মাঝখানে একটি দিন পড়েছিল ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। খেলা থাকায় সফরকারী নিউ সাউথ ওয়েলসের খেলোয়াড়েরা পরিবারের সঙ্গে বড়দিনের ছুটি কাটাতে পারবেন না বলে মন খারাপ করে বসে থাকেন। তাঁদের দাবি মেনে সেই ম্যাচ বড়দিনের পরদিন শুরু হয়েছিল।
বক্সিং ডেতে শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল, রাগবি, হকি, ঘোড়দৌড়, হান্টিংসহ আরও কিছু খেলার আয়োজন থাকে। ছুটির দিনে দর্শকদের আনন্দ দিতে এ দিন পুরোদমে চলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। আজই যেমন প্রিমিয়ার লিগে আটটি ম্যাচ আছে।
এ দিন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে জনপ্রিয় ঘোড়দৌড়ের পাশাপাশি চলে রাগবি ও আইস হকি লিগের খেলাগুলোও। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বক্সিং ডের মাহাত্ম্য বক্সিং ডে টেস্টের মাঝেই নিহিত।
Publisher & Editor