বক্সিং ডে টেস্টের খেলা দেখতে কখনো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গ্যালারিতে আসেননি স্যাম কনস্টাস। কখনো দর্শক হিসেবে না আসা সেই কনস্টাসই আজ এমসিজিতে বক্সিং ডে টেস্টে গড়লেন নতুন ইতিহাস। তা শুধু খেলতে নেমেই। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে তাঁর চেয়ে কম বয়সে কেউ ওপেন করতে নামেননি।
১৯ বছর ৮৫ দিন বয়সে ব্যাটিং করতে নামা কনস্টাসের রেকর্ডে পেছনে পড়ে গেছে ১৯২৯ সালে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্চি জ্যাকসনের ১৯ বছর ১৪৯ দিনে অভিষেকের কীর্তি। শুধু এতেই সন্তুষ্ট না থেকে টেস্ট অভিষেকটাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছেন কনস্টাস। ৬৫ বলে ৬০ রানের ইনিংসে এমন সব শট খেলেছেন, তারুণ্যের দুঃসাহসই যা শুধু সম্ভব করতে পারে।
বুমরার প্রথম ওভারে বলতে গেলে ব্যাটে বলই লাগাতে পারেননি। তারপরও বুমরার পরের ওভারে স্কুপ করতে গেছেন। বল ব্যাটে লাগেনি এবারও। প্রায় ৭৭ হাজার দর্শকের সামনে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা ১৯ বছর বয়সী তরুণের তাতে দমে যাওয়ার কথা। কিসের কি, বুমরাকেই এলোমেলো করে দিলেন কিছুক্ষণের মধ্যে। স্কুপে চার, রিভার্স সুইপে ছয়---বুমরার এমন অভিজ্ঞতা এর আগে কখনো হয়েছে কিনা সন্দেহ। আউট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্যালারির পাশে গিয়ে অটোগ্রাফ দেওয়া বা সেলফি তোলার দৃশ্যই–বা দেখা গেছে কবে! এমসিজির দর্শককে কনস্টাস এমনই মাতিয়ে তুলেছেন যে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনের নায়ক হয়ে গেছেন এরই মধ্যে। টসে জিতে ব্যাটিং করতে নামা অস্ট্রেলিয়া যে প্রথম সেশনে ১ উইকেটে ১১২ রান তুলে ফেলেছে, তার মূল কৃতিত্ব এই তরুণেরই।
জেনে একটু অবাকই হতে পারেন, টেস্ট অভিষেককে রাঙিয়ে তোলা এই স্যাম কনস্টাসের ব্যক্তিগত কোচ একজন বাংলাদেশি। তাহমিদ ইসলাম নামের এই বাংলাদেশি কনস্টাসের সঙ্গে মেলবোর্ন টেস্টেও কাজ করছেন।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য এজ জানিয়েছে, নাথান ম্যাকসুয়েনির জায়গায় ডাক পাওয়া কনস্টাস অস্ট্রেলিয়ার দলে যোগ দিয়েছেন রোববার। প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড ও সহকারী কোচ মাইকেল ডি ভেনুতো আগে কনস্টাসকে নিয়ে কাজ করেননি। এ ছাড়া কনস্টাসের বয়স বিবেচনা করে মেলবোর্নে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাটিং কোচকে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর সেই কোচের নাম তাহমিদ ইসলাম।
‘দ্য এজ’ তাহমিদকে বাংলাদেশের সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাহমিদ ও কনস্টাস দুজনেরই বাস সিডনিতে। সেখানকার ক্র্যানব্রুক স্কুলে কনস্টাসকে নিয়ে কাজ শুরু করেন তাহমিদ। কনস্টাসের মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার শেন ওয়াটসনও। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার এবারের গ্রীষ্মকালীন ক্রিকেট শুরুর দিকে দ্য এজকে তাহমিদ বলেছিলেন, ‘আমি তাকে (কনস্টাস) নিয়ে টেকনিক্যাল কাজগুলো করি। আর শেন খেলার মানসিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করে। যেটা খুব ভালোভাবে কাজে দিচ্ছে। আমাদের তিনজনের সম্মিলিত পথচলাটা দুর্দান্ত।’
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কিছুদিন ধরে ভালো খেলছেন কনস্টাস। তবে তাঁর টেস্ট দলে ডাক পাওয়ায় বড় ভূমিকা সফরকারী ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া প্রাইম মিনিস্টার একাদশের হয়ে খেলা ৯৭ বলে ১০৭ রানের ইনিংসের। দ্য এজের প্রতিবেদনে কনস্টাসের সঙ্গে তাহমিদের এবং তাহমিদের সঙ্গে ওয়াটসনের দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নসে একসঙ্গে কাজ করেছেন ওয়াটসন ও তাহমিদ।
তাহমিদ ২০১৭ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব দলে ছিলেন। তবে সে বছর কোনো ম্যাচ খেলেননি। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সে সময়ের এক ভিডিওতে তাহমিদকে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্যাম কনস্টাসের এমন রঙিন অভিষেকের পর এখন বাকি সব ছাপিয়ে তাহমিদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হবে হয়তো ‘স্যাম কনস্টাসের কোচ’।
Publisher & Editor