আন্দোলনের বছরেও ঢাকার সংগীতাঙ্গন সরব ছিল। আন্দোলনের সময় একের পর এক র্যাপ গান শ্রোতাদের মনে উন্মাদনা ছড়িয়েছে; আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সাধারণ শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বলা চলে, বছরটা র্যাপ গানের স্বীকৃতিরও বছর।
বিশেষ করে সেজানের ‘কথা ক’ থেকে হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’ মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে, ফিরছে। অথচ এত দিন র্যাপ গানকে পশ্চিমা সংস্কৃতি তকমা দিয়ে কান ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ শ্রোতারা।
কেন র্যাপ গান সাধারণ শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন, তা নিয়ে প্রথম আলোয় এক নিবন্ধে র্যাপার সেজান লিখেছেন, ‘নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা গানে পেলে সেটার মধ্যে শ্রোতারা নিজেকে খুঁজে পায়। দেশের সবাই তখন একই রকম সংকটের মধ্যে ছিল। গানে ওটা নিয়ে কথা বলেছি, ফলে সবাই গানের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।’ সেজানের ভাষ্য, ‘র্যাপ গান বাইরের সংস্কৃতি, সবাই ভালো চোখে দেখে না; অনেকে নাক সিঁটকায় যে গানে এগুলো কী বলছে! শ্রোতারা তখন বুঝেছে, এটা শুধু হাসিতামাশা নয়; আমাদের কথাই বলছে। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে গান করি। এটা এমন একটা বিষয় ছিল, যেটা সারা দেশের মানুষের ভালো লেগেছে।’
শুধু সেজান কিংবা হান্নানের গান নয়, আন্দোলনের সময় অর্ধশতাধিক র্যাপ প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ গানই শ্রোতারা লুফে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘দেশ সংস্কার’, ‘স্বাধীনতার গন্ধ’, ‘ছাত্র’, ‘স্লোগান’, ‘অধিকার’ ইত্যাদি।
আন্দোলনের সময় নাটক ও চলচ্চিত্র কার্যত থমকে ছিল, একমাত্র গানই সক্রিয় ছিল। এ সময় র্যাপের পাশাপাশি রক ও পপ গানও আলোচিত হয়েছে। তরুণ গায়িকা পারশা মাহজাবীনের ‘চলো ভুলে যাই’ রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল।
কাকতাল ব্যান্ডের ‘রক্ত গরম মাথা ঠান্ডা’, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের ‘ভয় বাংলায়’, অনি হাসানের ‘আমরা বীর’ এবং শহরতলী ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সোহাগ ‘ও প্রধান’ প্রকাশ করেছিলেন।
আলোচিত গান
দুষ্টু কোকিল
লাগে উড়াধুরা
রাজকুমার
বেঁচে যাওয়া ভালোবাসা
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
বছরজুড়ে গান
আন্দোলনের সময় কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। তবে এর আগে ও পরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার বেশ কয়েকটি গান সাড়া ফেলেছে। তুফান সিনেমার দুটি গান, ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে। ইউটিউবে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশিবার দেখা হয়েছে ‘দুষ্টু কোকিল’ গানটি। এটি এখন পর্যন্ত ২৪ কোটি ৫৫ লাখবার দেখা হয়েছে। আকাশ সেনের লেখা ও সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কনা ও আকাশ সেন।
‘লাগে উড়াধুরা’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরা। রাসেল মাহমুদ ও শরীফ উদ্দিনের লেখা গানটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে ২২ কোটি ৫৩ লাখবারের বেশি। এতে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ানের ‘মরার কোকিলে’ গানের সুর নেওয়া হয়েছে।
রাজকুমার সিনেমার টাইটেল গান ‘রাজকুমার’ও আলোচিত ছিল। আসিফ ইকবালের কথায় গানটির সংগীত আয়োজন করেছেন আকাশ সেন। কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম ও কোনাল। দেয়ালের দেশ সিনেমার ‘বেঁচে যাওয়া ভালোবাসা’, কাজলরেখা সিনেমার ‘ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু’, লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী সিনেমার আহমেদ হাসান সানির গাওয়া ‘মানুষ কেন এ রকম’ গানগুলো প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সিনেমার গানের পাশাপাশি ব্যান্ডের গানও এসেছে। পাশাপাশি স্বাধীন শিল্পীরা একক গান প্রকাশ করেছেন। শিরোনামহীনের ‘জানে না কেউ’, ইনডালোর ‘একান্ত গোলাপ’, অ্যাশেজ ব্যান্ডের ‘বিভ্রম’সহ বেশ কয়েকটি গান প্রশংসা কুড়িয়েছে।
একক গানের মধ্যে সায়ানের ‘এটা কল্পনা চাকমার গান’; ঈশান মজুমদার ও নন্দিতার ‘জেনে নিয়ো’; তাসনোভা তাবাসসুম অতসীর ‘অল্প একটু জীবনের গান’; কোক স্টুডিও বাংলার ‘মালো মা’ও ‘তাঁতী’; তাহসান ও অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের ‘রঙে রঙে রঙিন হব’; সৈয়দ অমির ‘মাতাল’সহ আরও বেশ কয়েকটি গান রয়েছে।
মাঝখানে আন্দোলনের সময় কোনো কনসার্ট না হলেও বছরজুড়েই কনসার্ট ছিল। এর মধ্যে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’, ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’, ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২. ০’সহ বেশ কয়েকটি কনসার্ট হয়েছে। এসব কনসার্টে পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান, আতিফ আসলাম গেয়েছেন। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ কনসার্টে জেমসকে দেখা গেছে।
আলোচিত গান
কথা ক
আওয়াজ উডা
চলো ভুলে যাই
মালো মা
রঙে রঙে রঙিন হব
Publisher & Editor