বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫

বাবা-মাকে না জানিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়েছি: সিঁথি সাহা

প্রকাশিত: ০১:৩২, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০

কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা। দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরই মাঝে সন্তানের মা হয়েছেন। গেল দুই বছর বাস্তব জীবনের ক্রান্তিকাল কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরেছেন অনেক আগেই। গতকাল নতুন গান নিয়ে হাজির হয়েছেন এই সংগীতশিল্পী। এ গানে তার সঙ্গী তাহসান খান। নতুন গান ও ক্যান্সার জয়ের গল্পসহ বেশকিছু বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

অনেকদিন পর মৌলিক গান করলেন...
তাহসান ভাইয়ের লেখা ও সুরে ‘একা ঘর আমার’ গান করলাম। তার সঙ্গে আমি গানটি গেয়েছি। আমার অনেক ভালো লাগছে। কারণ, অনেকদিন পর আমার একটি মৌলিক গান আসলো। তাও আবার তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে। এটা আমার জন্য অবশ্যই আনন্দের।

তাহসান খানের সঙ্গে কি এটা আপনার প্রথম গান
এর আগে তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা গান হয়েছে। তবে মৌলিক গান হয়নি। মৌলিক গান হিসেবে তার সঙ্গে এটাই আমার প্রথম গান। গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে যাওয়ার আগে অনেক কিছুই মনে হয়। অনেক সাপোর্ট দরকার হয়। একটা ভয়ও কাজ করে। কিন্তু তাহসান ভাই পুরোটাই আলাদা। কাজে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। সেই সঙ্গে যত ধরণের সাপোর্ট আছে তার থেকে আমি পেয়েছি। ফলে আমাদের কাজটা অনেক সুন্দর হয়েছে। আশাকরি সবার ভালো লাগবে।

গানে আপনাক কম দেখা যায়। কারণ কী
ঠিকই বলেছেন। আমি গান একটু কম করছি। তবে আশা করি এ বছর অনেক গান করবো। এই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক, সামনে কি হয়।

এখন অনেক ভালো আছি। বিশেষ করে আজ তো আরও ভালো আছি। তবে আমার চিকিৎসা শেষ। এখন ওষুধ চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী পাঁচ বছর এটা চালিয়ে যেতে হবে।

ক্যান্সার ফাইটার হিসেবে জার্নিটা কেমন ছিল...
সবার সাপোর্ট এবং আমার মনোবল আমাকে সার্ভাইব করিয়েছে। ক্যান্সারের কথা শুনলেই আমরা অর্ধেক অসুস্থ হয়ে যাই, যা আমার কখনোই হয়নি। বাবা-মাকে না জানিয়ে আমি একা সিঙ্গাপুর গেছি। চিকিৎসা করিয়ে আবার ফিরে এসেছি। সার্জারির দিন শুধু আমার সঙ্গে আমার ছোট ভাই ছিল। মিউজিক ও মনোবল আমার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর আপনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই সন্তান জন্ম দিয়েছেন...
হ্যাঁ, এটা আমার জন্য ভীষণ ঝুঁকি ছিল, আমি মেনে নিয়েই সেটা সাদরে গ্রহণ করেছি। সেই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন।

অনেকেই ক্যান্সারের বিষয়টি সেভাবে নেন না। তাদের জন্য কি বলবেন..
মূলত আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছিল। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে আমারা দেখি শতকরা তিন/চার শতাংশ নারীদের এই ক্যান্সার হয়। আমার পরিবারের কারো ক্যান্সার ছিল না। আমার পরের প্রজন্মের কি হবে আমি সেটা জানি না। দেশের বাইরে যারা থাকেন তিন-চার বছর পর পর একটা করে টেস্ট করা হয়। তারা সেটা করে নিতে পারেন। আর এটা আমাদের দেশেও আসার কথা। সেটা আসলে আরও ভালো হবে। তবে ক্যান্সার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্টেজ থেকেও মানুষ কামব্যাক করছে এবং আমার মত হাসিখুশিভাবে বেঁচে আছে।

আবারও গানে ফিরি। স্টেজ পারফর্মে আপনাকে কম দেখা যাচ্ছে ...
দেশের পরিস্থিতির কারণে স্টেজ পারফর্ম সবারই কম হয়েছে। আশার দিক হল- এখন সবকিছু ঠিক হচ্ছে। পুরোপুরি ঠিক হয়ে স্টেজ পারফর্মে নেমে যাব।

নতুন কতগুলো গান হাতে...
আজ একটা গান রিলিজ হল। আন্তর্জাতিক আর্টিস্টদের সঙ্গে কিছু গান করা চেষ্টা করছি। এছাড়া সাফকাত আলির সঙ্গে গান করেছি। সেটা এই মাসেই রিলিজ হবে। সেলিম মার্চেন্ট ও মাস্টার ডির সঙ্গে গান দ্রুতই আসবে। নতুন আরও কয়েকটি গান আমার পাইপলাইনে আছে। আশা করি সেগুলো সময় বুঝে রিলিজ দিতে পারব।

আন্তর্জাতিক আর্টিস্টদের সঙ্গে গানের কীভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন...
গানের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল আমি বিশ্বাস করি না। শিল্পী হিসেবে সব দেশের গান আমার কাছে সমান। কারণ, আমার নিজের ভাষার পাশাপাশি আমি হিন্দি, ঊর্ধ্ব ভাষায় গান করেছি। হিন্দি গানগুলো এখনো সেভাবে আসেনি। শুনলেই বুঝবেন কেমন হয়েছে।

সিনেমার গান নিয়ে কি ভাবছেন
একটা শিল্পীর স্বপ্নই থাকে তিনি প্লেব্যাক বা সিনেমার গান গাইবেন। আমারও স্বপ্ন তাই। কিন্তু আমাদের দেশের প্লেব্যাক একটা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এখানে একটা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। সিন্ডিকেটের শিকার আমি বারবারই হই। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের পাশের দেশে শ্রেয়া ঘোষাল, সুনিধি চৌহান, কবিতা কৃষ্ণমূর্তিসহ সবাই মোটামোটি গান করছে। কিন্তু আমাদের দেশের ঘুরেফিরে ওই একই শিল্পী। তাই প্লেব্যাক নিয়ে আমি খুব আশাবাদী না। তবে আমি সিনেমার গান করতে চাই, ভালো গান করে যেতে চাই।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor