বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কত দূর

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ |

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি আর জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কাতারের দোহায় আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। ওই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার বলছে, তারা এখন একটি ‘চুক্তির কাছাকাছি’ অবস্থায় পৌঁছেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ওই চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে। কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাস চুক্তির বিষয়ে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন—এমন একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত ১৫ মাসের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা একই ভবনে অবস্থান করে আট ঘণ্টা ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও মুখোমুখি নয়, তদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে পরোক্ষভাবে। কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আলোচনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা আশা করছে, এই দফার আলোচনা ‘পরিষ্কার ও বিস্তারিত একটি চুক্তিতে’ উপনীত হবে।
 
চুক্তির শর্ত নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে বলে আলোচকরা জানিয়েছেন। তবে এগুলোর বিস্তারিত নিয়ে এখন দর-কষাকষি চলছে।

জানা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার যে শর্ত ছিল হামাসের, সেটি তারা প্রত্যাহার করেছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে, উভয় পক্ষ একমত হয়েছে, প্রথম দিন হামাস তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। অন্যদিকে জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করবে ইসরায়েল। সাত দিন পরে হামাস আরো চারজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। অন্যদিকে গাজার দক্ষিণ এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষজনকে উত্তরের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেবে ইসরায়েল। তবে তাদের উপকূলীয় সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।

সালাহ-আল-দিন সড়ক দিয়ে গাড়ি, পশুচালিত যানবাহন ও ট্রাক চলাচল করতে দেওয়া হবে। তবে কাতার ও মিসরের কারিগরি নিরাপত্তা বাহিনী পরিচালিত একটি এক্স-রে মেশিনের মধ্য দিয়ে এগুলোকে যেতে হবে।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ৪২ দিনের জন্য ফিলাডেলফি করিডরে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করে উত্তর আর দক্ষিণ সীমান্তের মধ্যে ৮০০ মিটার লম্বা একটি বাফার জোন নিয়ন্ত্রণ করবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েল এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯০ জন রয়েছে, যারা ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কারাভোগ করেছেন। বিনিময়ে হামাস ৩৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা করতে যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে আবার বৈঠকে বসবেন আলোচকরা।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি কত দূর?
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলেছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে।

কাতারের সময় দুপুরের দিকে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। তিনি বলছেন, ‘প্রধান ইস্যুগুলো শনাক্ত করা হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে একটি চুক্তি হয়ে গেছে।’

মাজেদ আল-আনসারি সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেছেন, ‘(ইস্যুগুলোর) বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে উভয় পক্ষই জটিলতায় পড়েছে। কিছু ছোটখাটো বিষয় হয়তো পুরো প্রক্রিয়াটিকে দুর্বল করে তুলতে পারে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত ঠিক করতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি ভণ্ডুলও হয়ে যেতে পারে, অতীতে যেমন হয়েছে।’

তবে আজই চুক্তি হবে কি না, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মুখপাত্র জানাতে রাজি হননি। সময়সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বলা খুব কঠিন। তবে অতীতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যেকোনো আলোচনার তুলনায় আমরা অনেক বেশি কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছি।’

আল-আনসারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন ও হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুরোপুরিভাবে যুক্ত আছেন এবং একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে ‘একসঙ্গে’ কাজ করছেন।

বিবিসি সংবাদদাতারা বলছেন, এ রকম বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে, যা ছোট বিষয় বলে মনে করা হলেও উভয় পক্ষের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন আল-আনসারির কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, হামাসের নিহত নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি চুক্তিতে থাকবে কি না? আল-আনসারি অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দেননি।

তিনি বলছেন, এবার চুক্তির বিষয়ে ‘বিশেষ আশাবাদ’ তৈরি হয়েছে এবং ‘চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব হবে’ বলে মধ্যস্থতাকারীরা আশা করছেন।
আলোচনার অগ্রগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা—উভয়েই কৃতিত্ব দাবি করেছেন।
কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে (তার শপথ গ্রহণের দিন) যুদ্ধবিরতি না হলে দোজখ নেমে আসবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে রবিবার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরদিন সোমবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধে প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor