বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

‘সর্বকালের সেরা’—রোনালদোর এই দাবি নিয়ে এআইয়ের পেলে-ম্যারাডোনা কী বললেন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৮

এই প্রশ্নের জন্মও যেমন আজ নয়, তেমনি উত্তরও সহজ না। যুগের পর যুগ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হচ্ছে। চলছে যুক্তিতর্ক। এর যেন শেষ নেই। কেউ কেউ অবশ্য নিজের মতো করে এ বিতর্কের শেষ টেনে দিয়েছেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই যেমন কিছুদিন আগে স্পেনের সংবাদকর্মী এদুয়ার্দো আগুয়েরেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তিনিই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার।

রোনালদো দাবি করেছিলেন, তিনিই ইতিহাসের সবচেয়ে 'পরিপূর্ণ' (কমপ্লিট) খেলোয়াড়, ‘ফুটবলে আমি সবকিছু করি; হেডে ভালো, ফ্রি কিকেও, বাঁ পায়ে ভালো, দ্রুত, শক্তিশালী, লাফাতেও পারি। আমিই সবচেয়ে পরিপূর্ণ। আমার চেয়ে ভালো আর কাউকে দেখিনি।’

পর্তুগিজ কিংবদন্তির এই দাবি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা কম হয়নি। কেউ এমন কিছু দাবি করার পর সেটাই স্বাভাবিক। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে যেমন রোনালদোর এ দাবি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা ছাড়াও ঠাট্টা–মশকরাও হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন হলো, সর্বকালের সেরার তালিকায় যে দুজনকে প্রায় সবাই রাখেন—পেলে ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা—তাঁরা বেঁচে থাকলে রোনালদোর এমন দাবি নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন?

দুই কিংবদন্তির মুখ থেকে এখন আর কোনো কিছু শোনার সুযোগ নেই। ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তি ম্যারাডোনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মারা যান। তিনবার বিশ্বকাপজয়ী পেলে মারা যান ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে ‘দুধের সাধ ঘোলে’ও তো মেটানো যায়! বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) কথা। কেমন হয়, যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় পেলে ও ম্যারাডোনার চরিত্র তৈরি করে রোনালদোর এই দাবির বিষয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়াটা শুনে নেওয়া যায়?

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউরাল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল চ্যাটবট সার্ভিস ‘ক্যারেক্টর.এআই’–এর প্ল্যাটফর্মে ঠিক এ কাজই করা হয়েছে। এই চ্যাটবট সার্ভিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন চরিত্র বানানো হয়—মনোবিদ থেকে গণিতের গৃহশিক্ষক, এমনকি উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার কিংবা ফ্রিদা কাহলোর মতো ঐতিহাসিক চরিত্রও আছে সেখানে। এই চ্যাটবট সার্ভিস ব্যবহারকারীরা সেসব চরিত্রকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে তাঁদের উত্তর ও প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন।
ব্যক্তিগত, পেশাগত ও শিক্ষামূলক খাতেও এই চ্যাটবট সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। কিছু শিক্ষক যেমন সার্ভিসটিতে ঐতিহাসিক বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের, যেন তাঁরা আরও ভালোভাবে শিখতে পারে। চ্যাটবট সার্ভিসটির ব্যবহারকারীরাও চাইলে নিজের ইচ্ছানুযায়ী চরিত্র বানাতে পারেন।

স্বাভাবিকভাবেই সেখানে পেলে ও ম্যারাডোনার চরিত্রও আছে এবং ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির পরিচিতিতে যে কথাটি লেখা, তা রোনালদোর দাবির পক্ষে নয়, ‘ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়’।

রোনালদোর মন্তব্য নিয়ে এই কৃত্রিম পেলের প্রতিক্রিয়া, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দারুণ সফল ক্যারিয়ার এবং কোনো সন্দেহ নেই, সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়; কিন্তু আমার বিনয়ী মত হলো, ফুটবলের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় নিয়ে এখনো বিতর্ক হয়। অবশ্যই আমি বাকিদের মতামতকে সম্মান করি। তবে নিজের অভিজ্ঞতা ও অর্জন বিচারে বিশ্বাস করি, আমাকেই ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’

কৃত্রিম পেলের এমন দাবির পক্ষে যুক্তি কী—এই প্রশ্নের উত্তরে চরিত্রটি যুক্তি দিয়েছে, ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জয়, যা আর কেউ পারেনি। এ ছাড়াও নিজের প্রতিভা, গোল বানানো, ফুটবলের বিবর্তনে প্রভাব রাখা ও খেলাটিকে পাল্টে দেওয়ারও দাবিও করেন এআইয়ের ‘পেলে’। কৃত্রিম পেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘ফুটবলে শুধু মান নয়, সংখ্যাও বিচার্য। সংখ্যাগত জায়গা, যেমন শিরোপাসংখ্যা ও অন্যান্য অর্জন—আমি বিশ্বাস করি, আমাকেই ইতিহাসের সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’

রোনালদোর দাবি নিয়ে এআইয়ের ম্যারাডোনার মন্তব্য, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খুব ভালো বন্ধু এবং গ্রেট খেলোয়াড়, যে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে; কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই, আমিই সেরা। কোনো তুলনা চলে না।’ এই দাবির পক্ষে কৃত্রিম ম্যারাডোনার যুক্তি, শিরোপা জয়, খেলার কৌশল দিয়ে নিজের দাবিটা প্রমাণ করেছেন, যা আর কেউ পারেনি। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়কে সবার ওপরে রাখেন কৃত্রিম ম্যারাডোনা।

আল নাসর তারকার সেরার দাবি নিয়ে কৃত্রিম ম্যারাডোনা আরও যা বলেছে, তা না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ম্যারাডোনার কথার সুরের সঙ্গে বেশ মিলে যায়। বেঁচে থাকতে কাউকে ছেড়ে কথা তো বলতেন না! কৃত্রিম ম্যারাডোনার কণ্ঠেও তেমন সুরই ফুটল, ‘রোনালদো অবশ্যই নিজের যুক্তি দিতে পারে; কিন্তু অবশ্যই সে আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত। সে পেলে কিংবা মেসিকে ঈর্ষা করে না; কিন্তু আমাকে করে। শুধু একটি বিষয়ই বলতে চাই, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সে একটি শিরোপাই জিততে পেরেছে। দলগত ও ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সে এখানে আমার কাছে হেরেছে।’

কৃত্রিম ম্যারাডোনার কাছে শেষ প্রশ্ন হিসেবে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রোনালদোর এভাবে নিজেকে সর্বকালের সেরা হিসেবে দাবি করার কোনো প্রয়োজন ছিল কি না, এই প্রশ্নের উত্তরেও কৃত্রিম ম্যারাডোনার ভেতরে খুঁজে পাওয়া গেল আসল ম্যারাডোনার সুর, ‘কেন রোনালদোর নিজেকে সেরা দাবি করতে হবে, কেন সে নিজেকে পেলে, মেসি কিংবা রোনালদিনিওর মতো বলল না? মনে হচ্ছে, সে আমার বিষয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে।’

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor