হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে সরে যান তিনি। বছরের পর বছর তাঁকে পাওয়া যায়নি এফডিসিতে, দেখা যায়নি চলচ্চিত্র অঙ্গনের কোনো আয়োজনে। এমনকি শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও অনুপস্থিত ছিলেন। সহকর্মী, সহশিল্পীদের ভাষ্যে পপি ‘নিখোঁজ’। ফোনেও পাওয়া যায় না তাঁকে। পুরোপুরি চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন। এমনকি তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানাতেন, মেয়ে কোথায় আছে, তা তাঁরা জানেন না।
সহশিল্পীদের অনেকেই বলতেন, পপি বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। হয়েছেন সন্তানের মা। কিন্তু এ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য কেউ দিতে পারেননি। সেই পপি পারিবারিক বিরোধের জেরে জোর আলোচনায়। হঠাৎ তাঁর নাম সামনে এল, খবরের শিরোনাম তিনি। ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি সূত্রে এই আলোচনা। এই আলোচনার ফাঁকে পপির ছোট বোন ও মা মরিয়ম বেগম পপির গোপন বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আনেন। স্বামী আর সন্তানের ছবিও প্রকাশ করেন তাঁরা। এভাবেই স্বামী, সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। দীর্ঘদিন ধরেই আড়ালে থাকা এই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি হলে প্রকাশ্যে আসে তাঁর বিয়ে ও সন্তানের খবর।
জিডির খবর ছড়িয়ে পড়তেই সংবাদমাধ্যমে আসে অভিনেত্রীর স্বামী ও সন্তানের ছবি। ছবিতে দেখা যায়, স্বামীর জন্মদিনের কেক কাটার মুহূর্তে সন্তান আয়াতসহ দাঁড়িয়ে আছেন পপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় হলো পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আদনান উদ্দিন কামালকে বিয়ে করেছেন পপি। তাঁদের সংসারে চার বছরের একটি পুত্রসন্তান (নাম আয়াত) রয়েছে।
ব্যবসায়ী আদনানের সঙ্গে বছরখানেক আগেই শোবিজ পাড়ায় বিয়ের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ী আদনানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিয়ের খবর মিথ্যা। পপি আমাদের পারিবারিক বন্ধু। তাঁকে বিয়ের প্রশ্নই আসে না। একটা মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব ছড়াচ্ছে।
কৈশোরে সিনেমায় পা দেওয়া পপির প্রথম নায়ক শাকিল খান। ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয় করার সময় শাকিলের সঙ্গে তাঁর চেনাজানা শুরু। এরপর ওমর সানী, মান্না, শাকিব খান, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, অমিত হাসান, ইমন, নিরবসহ অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন পপি। তবে অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করলেও পপির প্রথম নায়ক শাকিল খানের সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম, এরপর প্রণয়ের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
পপির মা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, পপির সঙ্গে শাকিল খানের ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তবে তাঁদের বিয়ে হয়নি। আরেক চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সঙ্গেও পপির প্রেম ও বিয়ের গুঞ্জন ছিল। তবে লম্বা সময় পপি সিনেমাজগৎ থেকে দূরে ছিলেন।
পপির মা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পপি একবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। পপির সঙ্গে তিনিও গিয়েছিলেন। অনেক দিন চিকিৎসার পর পপির সেই রোগ ভালো হয়। এভাবেই রোগ, বিবিধ মনোবেদনার কারণে লম্বা সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন পপি। তবে ব্যবসায়ী আদনানের সঙ্গে বিয়ের খবরের পর নতুন করে পপি আলোচনায় আসেন।
প্রথম দুই দশক সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্য নায়িকাদের মতো বর্তমানে পপির হাতে সেভাবে কোনো কাজ নেই। বরং স্বামী-সন্তান নিয়ে নিজের মতো করে আছেন পপি।
পপির মায়ের দাবি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আদনান কামালের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ের তথ্য তিনি অনেক দিন জানতেন না। তবে আদনানকে তিনি অনেক আগে থেকেই চেনেন। তাঁদের বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। তখন পপির বন্ধু বলে জানতেন। পরে একসময় জেনেছেন যে এই আদনানই হচ্ছেন পপির স্বামী। পপির স্বামীর সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে ঈদসহ অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানে পপির সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পপির সন্তানের জন্য যতটুকু করার তিনি করেন।
গত পাঁচ বছরে পপির সঙ্গে তাঁর মা মরিয়ম বেগমের দেখা হয়েছে মাত্র কয়েকবার। বছরখানেক আগে তিনি হজ করতে গিয়েছিলেন। তখন পপির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। হজ শেষে পপি ও তাঁর একমাত্র সন্তানের (তিন বছর বয়সী) জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন। এর পর থেকে পপির সঙ্গে সেভাবে আর কোনো যোগাযোগ নেই।
Publisher & Editor