আফগানিস্তানে ক্রিকেট অবকাঠামোর কথা শুনলে আপনার মাথায় কী আসে? নিশ্চয়ই খুব ভালো কিছু নয়। আপনি একা নন, পুরো দুনিয়ার বেশির ভাগ মানুষের ভাবনাই তেমন। বিষয়টা যে আফগানিস্তানের মানুষের অজানা, তা–ও নয়।
শুধু সাধারণ মানুষ কেন, আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিও তা জানেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে এ নিয়ে তিনি কথাও বলেছেন, ‘সংবাদমাধ্যমে আমি অনেক কিছু দেখি যে আমাদের সুযোগ–সুবিধা, স্টেডিয়াম, একাডেমি নেই। এটা একদমই ভুল। আমাদের ভালো সুযোগ–সুবিধা আছে, ক্রিকেট একাডেমিও। কাবুল ও জালালাবাদে হাই পারফরম্যান্স সেন্টার আছে, আফগানিস্তানের প্রায় সব কটি অঞ্চলেই স্টেডিয়াম আছে।’
এত কিছু যখন আছে, তখন বিদেশি দলগুলো কেন আফগানিস্তানে যায় না? প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক। সবকিছু থাকলেও নিরাপত্তার কিছু ঘাটতি যে আছে, তা স্বীকার করেছেন হাশমতউল্লাহও। এ জন্যই দলগুলো আফগানিস্তান সফরে যায় না বলে মনে করেন তিনি। অবশ্য তাঁর আশা, শিগগিরই কোনো দল তাঁদের দেশে সফর করবেন।
সেটি হলে দৃশ্যটা কেমন হবে, একটা বর্ণনা দিয়েছেন হাশমতউল্লাহ, ‘যখন আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলি, তখনো মাঠভর্তি দর্শক থাকে। এমনকি মানুষ মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। ৩০, ৪০ বা ৫০ হাজার দর্শক আসে ফাইনাল বা এমন কিছু হলে। আমি জানি, যদি কোনো দল যায়, তাহলে হাজার হাজার দর্শক হবে। কারণ, ক্রিকেট নিয়ে একটা পাগলামি আছে। অনেক মানুষ ক্রিকেটকে ভালোবাসে। আশা করি, শিগগিরই ওই দিনটা আসবে।’
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে অবশ্য আফগানিস্তানের সুযোগ–সুবিধা নয়, আলোচনায় ছিল দেশটিতে নারী অধিকারের অবস্থা নিয়ে। সেখানে নারীদের ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ। কয়েকজন নারী ক্রিকেটারকে তো দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।
জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের দুই শর মতো সংসদ সদস্য ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে চিঠি পাঠিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কট করতে আহ্বান জানিয়েছিল। ২০২১ সালের পর তারা কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজও খেলেনি। একই বিষয়ে কয়েক দফায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়াও।
মাঠের ক্রিকেটে বেশ ভালো সময়ই কাটছে আফগানিস্তানের। সর্বশেষ টি–টোয়েন্ট বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে তারা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অতিমানবীয় ইনিংস না খেললে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেরা চারে পৌঁছে যেত তারা। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তাদের বড় স্বপ্ন নিয়ে এসেছে আফগানরা।
অথচ এমন সময়ে মাঠের বাইরের ঘটনায় ‘বয়কটের’ কথা শুনলে কেমন লাগে? শহিদির উত্তর, ‘আমার মনে হয় খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। বাইরে কী হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা শুধু মাঠের বিষয়গুলোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটাই আমাদের কাজ, এ জন্য বাইরের কিছু চাপে ফেলতে পারে না। পুরো দুনিয়া জানে আমরা ভালো খেলছি, বিশেষত গত তিন বছর মাঠে আমাদের পারফরম্যান্স খুব ভালো। আমরা কেবল মাঠের বিষয়গুলোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাই ওটাতেই নজর দিচ্ছি, আমরা ওই কাজটাই করি, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
Publisher & Editor