অনেক শিশুই মুখে খাবার দেওয়ামাত্র বের করে দেয় বা উগরে দেয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ‘রুমিনেশন ডিজঅর্ডার’ বলা হয়। সচরাচর শিশুর ৩ থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে এ জটিল রোগ প্রকাশ পায়। খাবার ওগরানো প্রায় প্রতিদিন ঘটে। মাঝখানে সুস্থ থেকে একনাগাড়ে কমপক্ষে এক মাস ধরে এমন উপসর্গ চলতে থাকে। তবে ঘুমানো অবস্থায় তা হয় না।
লক্ষণ
এ রোগে আক্রান্ত শিশুর না থাকে কোনো পেটের অসুবিধা, না কোনো বমিভাব। প্রধান বৈশিষ্ট্য, অনবরত খাবার গ্রহণের পর জাবর কাটার মতো প্রক্রিয়ায় উগরে দেওয়া খাদ্যাংশ আবার চিবোতে থাকা। আক্রান্ত শিশুর ওজন কমে যায়। তার বৃদ্ধি-বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কখনো মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগে।
কার্যকারণ
এ অসুখে দুই ধরনের আক্রান্ত শিশু দেখা যায়। প্রথমটা ‘সাইকোজেনিক’। এ শ্রেণিতে যাদের অবস্থান, তারা বাকি সব দিকে ভালো থাকে, যেমন তাদের দৈহিক বৃদ্ধি-মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক থাকে। এখানে রোগের সূচনা হিসেবে বাবা–মা ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের সংকটকে দায়ী করা হয়।
আরেক শ্রেণির শিশু আছে, যারা নিজে থেকে এ অভ্যাস রপ্ত করে নেয়। মানসিক সমস্যায় ভোগা শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
এর বাইরেও যেকোনো বয়সের শিশু এ শ্রেণির রুমিনেশন ডিজঅর্ডারে ভুগতে পারে। এমনকি মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের মধুর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো শিশু এ অসুখে আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
রোগটি সচরাচর নয়। তবু অসুখের পরিণতি বিবেচনা করে শিশুর এ ধরনের উপসর্গ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। ওই বয়সের শিশু সামান্য কারণেও বমি করতে পারে। খাওয়ানোর সময় বিভিন্ন কারণে শিশু প্রচুর বাতাস গ্রহণ করে। পরে সে বাতাস পেট থেকে বের হয়ে আসার সময় সঙ্গে দুধ বা অন্য খাবার তুলে নিয়ে আসে; যাকে বলা হয় ‘পসেটিং’। শিশুর এরূপ বমন ‘রুমিনেশন ডিজঅর্ডার’ বলে গণ্য করা ভুল। এসব তুচ্ছ কারণের বমিতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় না।
রুমিনেশন ডিজঅর্ডার সুনির্দিষ্ট করে বলার আগে শিশুর আন্ত্রিক নালির কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কি না, খতিয়ে দেখা হয়।
আক্রান্ত শিশুর মূল চিকিৎসা ‘বিহেভিয়ার থেরাপি’। এতে শিশু যাতে আগ্রহ নিয়ে, সন্তুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়ার পর ওগরানো মনোবৃত্তি যাতে শিশু ভুলে থাকে, সে চেষ্টাও চালানো হয়।
শিশুবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, শিশুর প্রাথমিক যত্নকারী যেমন, মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের সবার সহযোগিতায় এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। প্রয়োজনে মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় এ রোগ নিরাময়যোগ্য।
Publisher & Editor