টেনিস কোর্টে তারা ছিলেন মহা প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ কাউকে এক চুলও ছাড় দিতেন না। কিন্তু কোর্টের বাইরে তাদের বন্ধুত্ব ঈর্ষণীয়। গতকাল লেভার কাপে রজার ফেদেরারের বিদায়ী ম্যাচে সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।
ফেদেরারের জন্য অঝোরে কাঁদলেন রাফায়েল নাদাল। ম্যাচ শেষে দুই তারকাই একে অপরকে নিয়ে অনেক কথা বললেন। আবেগে বারবার থেমে যাচ্ছিল তাদের কণ্ঠ। পাঠকদের জন্য দুই কিংবদন্তির বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে নাদালের সঙ্গেই জুটি বেঁধেছিলেন ফেদেরার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে সুইস কিংবদন্তি বলেন, 'কীভাবে আমরা একে অপরের এত কাছাকাছি চলে এলাম জানি না। গত ১০ বছরে আমাদের যোগাযোগ অনেকটাই বেড়েছে। হয়তো সন্তান হওয়ার পরে আমি আরও বদলে গেছি বা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে এখন রাফার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, সেটা নিয়ে খুব খুশি। যখন খুশি রাফাকে ফোন করে যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে পারি। আশা করি রাফাও এভাবেই ভাবে। হয়তো নিয়মিত কথা হয় না। কিন্তু হয়। '
'রাফার পরিবার আমার খেলা দেখতে এসেছে, এটা ভাবতেই পারছি না। রাফা এখানে খেলতে এসেছে, অথচ সব নজর আমার দিকে। ব্যক্তি হিসাবে আমার প্রতি তাদের এই ভালোবাসা বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার মনের মধ্যে এটা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আশা করি আমার বাবা-মা, সন্তান, স্ত্রীকে দেখলেও তার একই অনুভূতি হয়। খুব ভালো লাগে এসব দেখে। (হাসতে হাসতে) আশা করি ভবিষ্যতে তারও অনেক সন্তান হবে। আমি কিন্তু তাকে এ ব্যাপারে উপদেশ দিতে পারি। কারণ, ব্যাপারটা সহজ নয়।
'তবে অভিভাবক হিসেবে আমরা সবসময় নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। একে অপরের সঙ্গে থাকলে আমরা সময়টা খুব উপভোগ করি। পিছন ফিরে তাকালে অনেক কিছু মনে পড়ে। তবে একসঙ্গে সময় কাটানোর থেকে বড় আর কিছুই নেই। দুজনে লক্ষ লক্ষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তার সঙ্গে কোনো বিকেলে যখন আড্ডা মারি, তখন মনে হয় সময়টা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। '
এরপর ২০টি গ্ল্যান্ডস্ল্যাম জয়ীকে নিয়ে নাদাল বলেন,'তাকে নিয়ে আমার যাবতীয় ভাবনার কথা আগেই বলে দিয়েছি। একটা অসাধারণ যাত্রা ছিল। প্রায় কাছাকাছি সময়েই আমরা খেলতে শুরু করি। আমি একটু ভালো খেলার পর রজার সবসময় আমার সামনে এসে দাঁড়াত। আমি সবসময় তাকে হারাতে চাইতাম। হয়তো একটা সময় আমরাই একে অপরের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলাম। তবে বরাবরই সম্পর্ক ভালো ছিল। আমরা একে অপরকে, পরিবারকে এবং দলকে সমীহ করি। কখনও আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি। '
'তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কই সবার আগে। যত আমাদের বয়স হবে, তত এই সম্পর্ক আরও ভালো হবে। দিনশেষে এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের মধ্যে অনেক মিল আছে। জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকম। কোর্টে আমাদের স্টাইল সম্পূর্ণ বিপরীত। হয়তো এ কারণেই আমাদের "শত্রুতা" এতটা উত্তেজনাকর। পারিবারিক জীবন বা ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের খুব একটা অমিল নেই, তাই না? তাই জন্যেই আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারি, প্রায়ই কথা বলি এবং খোলা মনে আড্ডা দিতে পারি। '
'রজারের মতো কোনো মানুষ সামনে থাকলে যে কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। যে মুহূর্তগুলো একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি এবং যে লক্ষ্যের দিকে একই সঙ্গে দুজনে এগিয়ে গেছি, তা কখনও ভোলা যাবে না। তার জীবন, তার ক্যারিয়ারের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। কোর্টে আমাদের মধ্যে শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও তার জীবনের শেষ পর্বে বন্ধুর মতো থাকতে পেরে খুব খুশি। '
Publisher & Editor