চুল ইমরান তাহিরের মতো। লম্বা, ঘাড় বেয়ে নেমেছে। দক্ষিণ আফ্রিকান লেগ স্পিনারের মতো মাথায় ব্যান্ডও আছে। রান আপ দেখলে মনে হবে সুনীল নারাইনের মতো। আর উইকেট পাওয়ার পর উদ্যাপন? কেসরিক উইলিয়ামসের নোটবুক উদ্যাপন। এই তিন মিলিয়েই লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের স্পিনার দীগ্বেশ রাঠি। শুধু স্পিনার নয়, রহস্য স্পিনার এবং রহস্যটুকু দিয়ে দীগ্বেশ এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আইপিএলে সেরাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য তাঁর আছে।
শুক্রবার রাতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ম্যাচেই তাকিয়ে দেখুন। লক্ষ্ণৌর হয়ে বোলিং করেছেন পাঁচজন। এর মধ্যে চারজনই ওভারপ্রতি ১০ বা তার বেশি রান খরচ করেছেন। শুধু একজনই ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২১ রান, ওভারে পাঁচ রানের একটু বেশি। একটি উইকেটও নিয়েছেন। এই বোলারটিই দীগ্বেশ। মাথায় রাখতে হবে, বোলিংটি করেছেন ২০৩ রান তাড়া করতে ৬ উইকেটে ১৯১ রান তোলা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে।
শুধু মুম্বাই ম্যাচই নয়, এবারের আইপিএলের লক্ষ্ণৌর হয়ে চার ম্যাচে এখন পর্যন্ত একবারই এক ওভারে ৮ এর বেশি রান দিয়েছেন দীগ্বেশ। সব মিলিয়ে ৭.৬২ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
২৫ বছর বয়সী দীগ্বেশ মূলত লেগ স্পিনার। তবে বৈচিত্র্য আছে তাঁর বোলিংয়ে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যারিবিয়ান স্পিনার নারাইনের মতো। দীগ্বেশ কাল মুম্বাইয়ের বিপক্ষে লক্ষ্ণৌর ১২ রানে জয়ের পর জানিয়েছেন, নারাইনকে দেখেই তিনি বোলার হয়েছেন, ‘সুনীল নারাইনের বোলিং দেখে বোলিংয়ের প্রেমে পড়ি। আমি ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করতে ও আউট করতে পছন্দ করি, যেমন নারাইনও। চাপের মুখে তিনি যেমন শান্ত থাকেন, তেমনই থাকতে চাই।’
লেংথের ওপর নিয়ন্ত্রণই দীগ্বেশকে রহস্যময় করে তুলেছে। ইএসপিএনক্রিকইনফোর হিসাব অনুযায়ী, আইপিএলে এ পর্যন্ত তাঁর ৯৬টি ডেলিভারির মধ্যে ৮০টি ডেলিভারি ‘গুড লেংথ’ কিংবা তার একটু পেছনে পড়েছে। এই ৮০টি ডেলিভারিতে মাত্র ৯৫ রান দিয়েছেন দীগ্বেশ। মাত্র ৩টি ডেলিভারি খাটো লেংথে এবং ১৩টি ডেলিভারি ফুল লেংথে করেছেন দীগ্বেশ। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১৯টি ডেলিভারি ছিল ভালো লেংথ কিংবা একটু পেছনের লেংথে। খাটো লেংথের ডেলিভারি ছিল না একটিও।
দীগ্বেশ রাঠির উত্থান দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সে টুর্নামেন্টে সাউথ দিল্লির হয়ে ৭.৮৩ ইকোনমিতে ১০ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর আইপিএলের মেগা নিলামে তাঁকে ৩০ লাখ রুপির ভিত্তি মূল্যে কেনে লক্ষ্ণৌ। অনুশীলন ম্যাচে নজর কেড়েই এখন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির একাদশে নিয়মিত দীগ্বেশ। লক্ষ্ণৌর কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার তাঁকে প্রশংসাপত্র দিয়েছেন এভাবে, ‘অন্য সব গ্রেট স্পিনারদের মতোই সে বোলিং করতে পছন্দ করে। সে যদি দিনে ১৬ ঘণ্টা বোলিং করতে পারত, তাহলে ১৬ ঘণ্টাই করত। সে সম্ভবত হোটেলের করিডরেও বল করে। সকালের নাশতায় বল করে, গোসলে বল করে, সব জায়গাতেই বল করে। বছরের পর বছর অনুশীলনের পুরস্কার পাচ্ছে সে।’
তবে দীগ্বেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তার জায়গাও আছে। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে প্রিয়াংশ আর্যকে আউট করে কেসরিক উইলিয়ামসের মতো নোটবুক উদ্যাপনের সময় শারীরিকভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানার পাশাপাশি একটি ডিমেরিট পয়েন্টের শাস্তি হয়েছিল দীগ্বেশের। কাল মুম্বাইয়ের বিপক্ষে নমন ধীরকে আউট করে আবার নোটবুক উদ্যাপন করায় জরিমানা হয়েছে ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ। দুটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছে। মোট তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট পাওয়া দীগ্বেশের নামের পাশে আর একটি ডিমেরটি পয়েন্ট যোগ হলেই এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হবেন।
লক্ষ্ণৌর পেসার শার্দুল ঠাকুর মনে করেন, দীগ্বেশের মতো এমন চরিত্র ক্রিকেটেরই প্রয়োজন, ‘সে অসাধারণ বোলার। চরিত্রটাও বর্ণিল। খেলায় আমাদের এটাই প্রয়োজন। আমাদের এমন চরিত্র দরকার যে দলের হয়ে পারফর্ম করবে, নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় পাবে না। সে সব সময়ই এটা করে এবং এটাই তার সবচেয়ে শক্তির জায়গা।’
Publisher & Editor