রিশাদ হোসেনের মাথায় ফজল মাহমুদ ক্যাপ। আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দিচ্ছেন সেই টুপি, যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির টুপি এটি।
এই ছবি তাঁর দল লাহোর কালান্দার্স পোস্ট করেছে নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে। ক্যাপশনে লেখা, ‘স্পিনিং ম্যাজিক! পিএসএলের ১০ম আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ায় ফজল মাহমুদের ক্যাপ রিশাদ হোসেনের।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এই ছবি পরম প্রশান্তির। বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে অন্য দেশের খেলোয়াড়দের ভালো করার ছবিই তো এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই দেখতে হয়। রিশাদ সেখানে অন্য স্বাদ এনে দিলেন, যেটাকে আপনি বলতে পারেন দেশের ছেলের বৈদেশিক বীরত্ব।
অবশ্য পিএসএল তো কেবল শুরু হলো। সামনে নিশ্চয়ই রিশাদের এমন ছবি দেখা যাবে আরও! যদিও শাহরিয়ার নাফীসের দেরি সহ্য হয়নি। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ ক্রিকেটার এবং বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা ইনচার্জ কাল রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে রিশাদের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘রিশাদের পাকিস্তান জয়...।’
তিন ম্যাচ খেলে দুটিতে জিতেছে লাহোর। ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের বিপক্ষে লাহোরের হেরে যাওয়া প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি রিশাদ। কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ঘটে তাঁর পিএসএল অভিষেক। দলের ৭৯ রানের জয়ে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অভিষেক মাতান বাংলাদেশের এই লেগ স্পিন অলরাউন্ডার।
এরপর গতকাল করাচি কিংসের বিপক্ষেও লাহোরের ৬৫ রানের জয়ে রিশাদের শিকার ৩ উইকেট। এবার রান দিয়েছেন আরও কম-২৬। মজার ব্যাপার হলো, লাহোরের এ দুটি ম্যাচে ম্যাচসেরা যেমন ফখর জামান, তেমনি দলের সেরা বোলারটির নাম রিশাদ। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন মজা করে বলতেই পারেন, রিশাদকে প্রথম ম্যাচে দলে নিলে লাহোর হয়তো হারত না!
সেই সিদ্ধান্ত লাহোরের টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি যে রিশাদে মজেছে, তা বলাই যায়। গতকাল জয়ের পর রিশাদের দারুণ প্রশংসা করেন লাহোর অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। এ বছর বিপিএলে ফরচুন বরিশালে রিশাদের সতীর্থ ছিলেন পাকিস্তানি এই পেসার। দুজনের সম্পর্ক অনেকটাই বন্ধুর মতো এবং একে অপরকে ভালো জানেনও।
জয়ের পর রিশাদকে নিয়ে লাহোরের এ অধিনায়ক বলেন, ‘রিশাদ বাংলাদেশের হয়ে ভালো খেলে এসেছে, সে তাদের ভবিষ্যৎ তারকা। মাঝের ওভারগুলোয় সে দারুণ করছে। তাদের মিডল অর্ডারকে দাঁড়াতে দেয়নি।’
লাহোরের ২০১ রান তাড়া করতে নেমে ৭ ওভার শেষে করাচি যখন ৩ উইকেটে ৪৫, তখন রিশাদকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। প্রথম ওভারেই প্রায় ‘আনপ্লেয়বল’ ছিলেন রিশাদ। রান দেওয়ার চেয়ে উইকেট নিয়েছেন বেশি! ১ রানে ২ উইকেট! শান মাসুদ ও ইরফান খানকে ফেরান।
তাঁর দ্বিতীয় ওভারেও স্পিন ফাঁস-যেখানে আটকেছেন আব্বাস আফ্রিদি। এ ওভারে ৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন রিশাদ। অর্থাৎ ২ ওভার শেষে রিশাদের বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ২-০-৪-৩! রিশাদ তাঁর নিজের বাকি দুটি ওভারে উইকেট পাননি। নিজের তৃতীয় ওভারে রান দেন ১১, চতুর্থ ওভারে ১২। তবে যা করার নিজের প্রথম দুই ওভারেই করে দেন রিশাদ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লাহোরের উইকেটকিপার স্যাম বিলিংসও রিশাদের প্রশংসা করেন, ‘রিশাদের কথা বলতেই হয়। তরুণ একটা ছেলে যেভাবে বোলিং করল! এবারই প্রথম আমি তার বোলিং সরাসরি দেখছি ও একসঙ্গে খেলছি। সে অবিশ্বাস্য, দুর্দান্ত। আর আমার মনে হয় এই সংস্করণে স্পিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইনিংসের মাঝে উইকেট নেওয়া যায়। সে অসাধারণ।’
কোয়েটার বিপক্ষে জয়েও প্রশংসায় ভেসে গিয়েছিলেন রিশাদ। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অন্যতম মালিক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সামিন রানা লাহোরের ড্রেসিংরুমে বলেন, ‘আমার বাংলাদেশি ভাইকে নিয়ে আমি কী বলতে পারি...রিশাদ, আমার মনে হয় তুমি গেম চেঞ্জার (ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছ)। তুমি যেভাবে বল করেছ, তা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছ যে এই দলের বোলিং আক্রমণই এবারের টুর্নামেন্টে সেরা।’
পিএসএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় তাকালে মজার একটি বিষয় চোখে পড়বে। ২ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে রিশাদ। দ্বিতীয় কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সের আবরার আহমেদও রিশাদের মতোই লেগ স্পিনার। ২ ম্যাচে তাঁরও শিকার ৬ উইকেট। রিশাদের মতোই মোট ৮ ওভার বোলিং করে স্ট্রাইক রেট ৮.০। কিন্তু আবরার দিয়েছেন ৭৫ রান আর রিশাদ ৫৭। আবরারের ১২.৫০ বোলিং গড়ের চেয়েও রিশাদের বোলিং গড় ভালো (৯.৫০)।
Publisher & Editor