স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও, গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি ভারতের বিহারের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের সঙ্গে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারের সম্ভাব্য যোগ রয়েছে।
শিশুর স্নায়ুবিকাশে মোবাইলের নেতিবাচক প্রভাব
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম একটি নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। যার মূল ভিত্তি স্থাপিত হয় গর্ভকালীন সময়ে।
গর্ভধারণের প্রায় তিন সপ্তাহ পর শুরু হয় শিশুর নিউরাল টিউব গঠনের প্রক্রিয়া, যা পরবর্তীকালে রূপ নেয় মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে। ৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে নিউরোন বা স্নায়ুকোষ, যেগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোগ যত শক্তিশালী হয়, শিশুর চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণ তত স্বাভাবিক ও প্রখর হয়।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে কী হচ্ছে?
মোবাইলের ব্লু লাইট হরমোনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে—বিশেষ করে মেলাটোনিন নামে পরিচিত স্লিপ হরমোনে।
গর্ভবতীর মায়ের পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ব্লু লাইট সেই ঘুমে বিঘ্ন ঘটিয়ে গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুবিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া মোবাইল ব্যবহারের সময় মা ও শিশুর মানসিক সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে, যা আচরণগত সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে গবেষণা যদিও এখনো বাকি আছে।
বাস্তব চিত্র: অটিজমে বাড়ছে শিশু আক্রান্তের সংখ্যা
প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। শিশুরা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না, অনুভূতির প্রকাশে সমস্যা হয় এবং ভাষা বিকাশে আসে দেরি। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে, তাদের মায়েরা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন।
কী করা উচিত?
চিকিৎসকদের পরামর্শ—গর্ভাবস্থায় মায়েরা যেন গল্পের বই পড়েন, কবিতা বলেন, গান শোনেন এবং মোবাইল স্ক্রিন থেকে দূরে থাকেন। এই অভ্যাস শুধু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষেই ভালো নয়, বরং শিশুর স্নায়ুবিকাশেও বড় ভূমিকা রাখে।
অতএব, প্রযুক্তির ভারে চাপা পড়ে না যাক ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার সীমিত রাখা, সঠিক ঘুম ও মানসিক প্রশান্তিই হতে পারে সুস্থ সন্তানের মূল চাবিকাঠি।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
Publisher & Editor