বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ইমরান খান গ্রেপ্তার: পাকিস্তান রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ২২:০০, ০৯ মে ২০২৩ | ২৮৮

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদে হাইকোর্টের বাইরে থেকে দুর্নীতির মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ইমরানকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর মাথায় ও পায়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পাকিস্তান।

রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা অমান্য করে বিক্ষোভ করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সমর্থকরা। এ ছাড়া করাচি, লাহোর, পেশোয়ারসহ ছোট-বড় সব শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেছে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের।

দুটি মামলায় হাজিরা দিতে গতকাল হাইকোর্টে যান ইমরান। তখনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমরানকে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দ্য ডন অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে ইমরানের গাড়িটি পৌঁছালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর (রেঞ্জার্স) সদস্যরা তা ঘিরে ধরেন। তাঁকে গাড়ি থেকে বের করে আনেন। এ সময় হেনস্তার শিকার হন ইমরান। তাঁকে ধাক্কা মারা হয়। পরে ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) আকবর নাসির খান এক বিবৃতিতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পিটিআইপ্রধান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি একটি আবাসন কোম্পানির ৫ হাজার কোটি রুপি বৈধ করতে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি রুপি নিয়েছেন। পুলিশের আইজি জানান, ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তারের আগে এক ভিডিও বার্তায় ইমরান খান বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখানো হলে তিনি কারাগারে যেতে প্রস্তুত। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ, রেঞ্জার্স অথবা সেনাবাহিনীর সদস্যদের আনার প্রয়োজন নেই। ইমরান বলেন, তিনি দোষী নন। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি তাঁর আছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, বেশ কয়েকবার তলব করা হলেও ইমরান আদালতে হাজির হননি। জাতীয় কোষাগারের ক্ষতি করার জন্য ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। ইমরানের ওপর নির্যাতন চালানোর কথা অস্বীকার করেন তিনি।

ইমরানের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পিটিআই। ভিডিওটি বানানো হয়েছিল গত বছর। এতে ইমরান তাঁর সমর্থকদের বলছেন, ‘যখন আমার এ বক্তব্য আপনাদের কাছে পৌঁছাবে, তখন হয়তো বেআইনি মামলায় আমি কারাগারে। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে, মৌলিক অধিকার, আইন ও গণতন্ত্র আজ সমাহিত।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো আপনাদের সামনে আবার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগে আমার আর নাও হতে পারে! স্বাধীনতা কেউ আপনার পাতে তুলে দেবে না। আপনাকে এর জন্য কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই করতে হবে।’

ইমরানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপি হাতে পেয়েছে দ্য ডন। এতে দেখা গেছে, চলতি মাসের ১ তারিখে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক ইমরানের গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চেয়েছেন। পিটিআই নেতা ফয়সল চৌধুরী জানান, বিচারপতি আমের ফারুক আদালতে হাজির হওয়ার জন্য শহরটির পুলিশপ্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি ‘সংযম’ প্রদর্শন করছেন। ইসলামাবাদের পুলিশপ্রধান হাইকোর্টে হাজিরা না দিলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে তলব করবেন। আমের ফারুক বলেছেন, ‘আদালতে আসুন এবং আমাদের জানান কেন এবং কোন মামলায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

পিটিআই নেতাকে গ্রেপ্তারকালে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার গোহর খান। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকালে ইমরানের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাঁরা (রেঞ্জার্স) ইমরানের মাথা ও পায়ে আঘাত করেছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, হাইকোর্টের ফটক দিয়ে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই আধা-সামরিক বাহিনীর কয়েকটি কন্টিনজেন্ট এবং সশস্ত্র সদস্যরা ইমরানকে ঘিরে ধরেন।

পিটিআইর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উমর এক টুইটে জানান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশির নেতৃত্বাধীন দলের ছয় সদস্যের কমিটি পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো পৃথিবী দেখছে, এখানে কোনো আইনের শাসন নেই।’ পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান কুরেশি বলেছেন, রাজনৈতিক ও আইনিভাবে তাঁরা তাঁদের নেতার মুক্তির জন্য লড়বেন। এক বিবৃতিতে তিনি ইমরানের গ্রেপ্তারে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটা অবিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য। ইমরান আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য বের হওয়ার সময়ই গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানজুড়ে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিক্ষোভের ডাক দেন। কিন্তু তাঁর ডাকে পাকিস্তানের মানুষ সাড়া দিলেও বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকেনি। পুরো পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শহরগুলোতে আগুন, ধোঁয়া, কাঁদানে গ্যাস, গ্রেপ্তার– সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলজাজিরার প্রতিবেদক কামাল হায়দার ইসলামাবাদ থেকে বলেন, ‘পরিস্থিতি অনিশ্চিত’।

এক টুইটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, সামান্য রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ইমরান খান নিয়মিত যেভাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অপদস্থ ও হুমকি দেন, তা নিন্দনীয়।

২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান। এর পর থেকে মামলা মাথায় নিয়ে আদালতে দৌড়াতে হচ্ছে তাঁকে। গত নভেম্বরে এক রাজনৈতিক র‌্যালিতে তাঁর ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। তখন তাঁর এক সমর্থক নিহত হন। আহত হন ১৩ জন। পায়ে গুলিবিদ্ধ ইমরান হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বেশ কয়েক দিন। এ হামলার জন্য তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেন। পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া হামলাকারী জানায়, তিনি একাই হামলার সঙ্গে জড়িত। অব্যাহতভাবে ইমরান পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেন। এতে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor